বৃহস্পতিবার, ১৩ জুলাই, ২০১৭

মাত্রা শিক্ষা


নয়ন ভাই, শুধু আপনার জন্য এ কবিতাটার ছন্দ নিয়ে সামান্য আলোচনা করি। এটা মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত। প্রতি মূল পর্বে ৬ মাত্রা আছে, এবং কোনো কোনো স্থানে ৪ মাত্রার একটা অতিপর্ব আছে।

তুমি কাছে এলে / ভালো থাকি আমি -- প্রতি পর্বে ৬ মাত্রা
যতখানি ভালো / থাকা যায় -- ১ম পর্ব ৬ মাত্রা, ২য়টি ৪ মাত্রার অতিপর্ব
এই পৃথিবীর / সবটুকু মায়া -- প্রতি পর্বে ৬ মাত্রা
শুষে নিয়ে তুমি - ৬ মাত্রা
আমার কপোলে / প্রেম দাও - ৬ মাত্রা/ ৪ মাত্রা

কী যে ভালো লাগে - ৬
কী যে ভালো লাগে / তোমার চুলের / সুগন্ধি - ৬+৬+৪
কতটা জীবন / পার করে দিই- ৬+৬
বহতা নদীর / সীমান্তে - ৬+৪

কিন্তু সর্বত্র মূল পর্ব বা অতিপর্বের মাত্রাসংখ্যা ৬/৪ বজায় রাখা সম্ভব হয় নি; অর্থাৎ, ছন্দের দিক থেকে কবিতাটি ত্রুটিপূর্ণ। এটা হয়েছে এ কারণে যে লিখবার সময় আমি মাত্রা গুনে লিখি নি, শুধুমাত্র ছন্দপতন ঠেকিয়ে লিখেছি। ত্রুটিপূর্ণ জায়গাগুলো দেখুনঃ

তুমি এসেছিলে / হঠাৎ করেই ৬+৬ (ৎ-কে একমাত্রা ধরেছি, যদিও সচরাচর এটাকে গোনা হয় না)
বিরান গ্রীষ্মে / বৃষ্টি নিয়ে ৬+৫ (২য়টি অতিপর্ব না, মূল পর্ব)
জানি না আমার / কী হয়েছিল ৬+৫ (২য়টিও মূল পর্ব)
হঠাৎ জীবন / উঠলো জেগে ৬+৫ (২য়টিও মূল পর্ব)

তুমি চলে গেছো / সাথে নিয়ে গেছো ৬+৬
সকল আলো, সবখানি প্রেম ৫+৬
তুমি না থাকলে / আমিও থাকি না ৬+৬
জ্বলেপুড়ে হই বিনিঃশেষ ৬+৫ (এখানে ঃ-কে একমাত্রা ধরা হয়েছে; এটাকেও ৎ বা ং-এর মতো শূন্য মাত্রা ধরা হয়)

এই মাত্রাসংখ্যা এখন ঠিক করতে গেলে কবিতার গতিশীলতা ব্যহত হতে পারে, অনুপযুক্ত শব্দ হয়ত চলে আসতে পারে, যাতে কবিতাটি আড়ষ্টতাপূর্ণ বা আর্টিফিশিয়াল হয়ে যেতে পারে (এখনই যে কবিতা হয়েছে, তা অবশ্য দাবি করছি না)।

আপনার ছন্দজ্ঞান খুব ভালো, আপনার কবিতা পড়লেই বোঝা যায়। গতকাল গদ্যকবিতা সম্পর্কে আমরা আলোচনা করছিলাম, এটাকে তার ধারাবাহিক অংশ হিসাবে ভাবা যেতে পারে। এটাতে কোনো অন্ত্যমিল না থাকলেও এটা গদ্যকবিতা না। এটা মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত কবিতা।

(সোনাবীজ বা ধুলোবলি ছাই ভাইয়ের প্রতিউত্তর)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন