শনিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

রয়ে গেছে ক্ষত


আমি ভালোবাসি এই সুন্দর পৃথিবী,
বাঁচিবার চাই হাজার বছর জনমানুষের অন্তরে।
এইতো চাওয়া মোর, বিশ্বাসে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ লক্ষ্যতে।

ভালোবাসা!
সেতো বড়ই উদাসী মনোভাবাপন্ন ছিল-
আমার প্রতি সর্বক্ষণ...!
ভালোবাসতে বাসতে পাওয়ার হিসেবটায়-
ব্যর্থই থেকে গেল এই জীবন।

মাঝে মাঝেই নিজেকে
প্রয়োজনহীন মনে করি পৃথিবীর বুকে!
কেন আমার এমন মনে হয়...?!
কে দিবে এর উত্তর...!
তুমি ছাড়া কারো কি জানবার কথা পৃথিবীতে..?

জানিনা,
শ্রাবণের সেঁতসেঁতে চারণভূমির মতো-
ভিজে থাকে কেন চোখ দুটোর পাতা...!
কখনওবা গড়িয়েও পড়ছে দু'ফোটা!
নেই! কেউ নেই বুঝবে এই লুকানো ব্যথা।

এমন একজন বন্ধু নাই
শুনবে বুঝবে মনের কথা
মুখ দেখিয়া সদাই।
কাঁদবে যখন আমার অন্তর-
জ্বলবে তাহার বুকের ভিতর,
চোখের উপর চোখ পড়িলে
জানবে সে মোর মনের খবর।

তোমাকে হারিয়ে আমিওতো বেঁচেই আছি,
শুধু মনটাতেই রয়ে গেছে ক্ষত;
বড্ড একাকীত্বে ডুবেছে মন-
নীড়'হীন, আশ্রয়হীন, যেন উদ্বাস্তু...!

বুধবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

ড. কামাল হোসেনের দশ ডিগবাজী -আওয়ামী যুবলীগ

ড. কামাল হোসেন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতা, প্রবীণ আইনজীবী এবং রাজনীতিবিদ। বর্তমানে গণফোরামের সভাপতি ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক।

সম্প্রতি তার সমমনা দলগুলো নিয়ে জাতীয় ঐক্যের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। এই মূহুর্তে সেটিই এখন বাংলাদেশের আলোচিত বিষয়।

মঙ্গলবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ড. কামালকে নিয়ে দেশের একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ।

কামাল হোসেনের ডিগবাজির বিজ্ঞাপনটি নিম্নে হুবহু তুলে ধরা হয়েছে

ড. কামাল হোসেনের ১০ ডিগবাজি _আওয়ামী যুবলীগ

বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক অদ্ভুত চরিত্র গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আশির্বাদে রাজনীতিতে উত্থান তাঁর।

কিন্তু আজকাল আওয়ামী লীগ তাঁর চক্ষুশূল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবারই প্রথম নয়, কামাল হোসেনের আদর্শ পরিবর্তনের ইতিহাস বাংলাদেশের বয়সের সমান।
ড. কামাল হোসেন যে কার ইশারায় নড়েন আর কেন বারবার ডিগবাজি খান তা রাজনৈতিক মহলের মুখরোচক আলোচনার বিষয়।

আসুন জেনে নিই মিডিয়ার প্রিয় কিন্তু অজনপ্রিয় এই রাজনীতিবিদের ডিগবাজির ইতিহাস।

®®ডিগবাজি নাম্বার এক--

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় কথা হয়েছিল, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ড. কামাল হোসেন একসঙ্গে ভারতে যাবেন।
একাত্তরের সময় ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলাম ড. কামালকে বিষয়টি অবহিত করেছিলেন। ড. কামাল গাড়ি থেকে নেমে আত্মীয়ের বাসায় গেলেন। এর পরদিন থেকে তিনি লাপাত্তা। এক পর্যায়ে লন্ডনে শ্বশুড়বাড়ি চলে গেলেন ড. কামাল।

অথচ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু যখন দেশে ফিরলেন, ড. কামালকে সঙ্গে নিয়েই ফিরলেন। স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু প্রথমে ড. কামালকে আইন মন্ত্রণালয় এবং পরবর্তীতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিলেন।

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে না থেকে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ছিল ড. কামালের প্রথম ডিগবাজি।

®®ডিগবাজি নাম্বার দুই---

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের আগে ড. কামাল হোসেন হঠাৎ করেই বিদেশে চলে গিয়েছিলেন। কোন অফিসিয়াল ট্যুর কিংবা রাষ্ট্রীয় কাজে নয় ড. কামাল বিদেশে গিয়েছিলেন ব্যক্তিগত ট্যুরে। তাঁর সময়মতো দেশ ত্যাগে যে কারো মনে প্রশ্ন উঠবে, তাহলে কি ড. কামাল আগে থেকেই জানতে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মতো একটি কলঙ্কজনক ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে?

বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর ড. কামালের কর্মকান্ডে এই সন্দেহ আরো ঘনীভূত হয়। সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জার্মানিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী এক প্রকার জোর করেই তাকে বঙ্গবন্ধুর বেঁচে যাওয়া দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার সঙ্গে দেখা করতে নিয়ে আসেন। তখন শেখ রেহানা তাকে এই বিষয়ে অন্তত একটি বিবৃতি দিতে অনুরোধ করেন।

শেখ রেহানা বলেন, যেহেতু ড. কামাল একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী এবং বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার অত্যন্ত ঘনিষ্টতা ছিল আর বঙ্গবন্ধুই তাঁকে মন্ত্রী বানিয়েছিলেন, তাই বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করে ড. কামাল হোসেনেরই বিবৃতি দেয়া উচিত।

কিন্তু সেই সময়টাতে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে কোন বিবৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানান ড. কামাল।

®®ডিগবাজি নাম্বার তিন---

সেনাপ্রধান লে. জে হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ ১৯৮২ সালে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পরপরই সারাদেশে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। এক পর্যায়ে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে দেশ উত্তাল হয়ে পড়ে। তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা ড. কামাল হোসেনও এই আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করেন। সে সময় এরশাদের পতন না হওয়া পর্যন্ত তিনি ঘরে ফিরবেন না এমন বক্তৃতাও দিয়েছেন।

কিন্তু আবারও ডিগবাজি খেলেন ড. কামাল। ৮৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বেশ কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের মিছিলে সেনাবাহিনীর হামলায় জাফর, জয়নাল, কাঞ্চন, দীপালী সাহাসহ অনেক শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার তিনদিনের মাথায় চলে গেলেন লন্ডনে।

এরপর ৯০’র এরশাদ বিরোধী আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন ২৭ নভেম্বর ড. কামাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেন। ওই দিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় এরশাদের পেটোয়া বাহিনীর হাতে নিহত হন ডা. শামসুল আলম মিলন। আন্দোলন তুঙ্গে উঠে। ৪ ডিসেম্বর পদত্যাগের সিদ্ধান্ত জানান এরশাদ।
এর পরদিনই অর্থাৎ ৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরেন ড. কামাল।

®®ডিগবাজি নাম্বার চার---

১৯৮৫ সালে এরশাদ সরকার হরিপুর গ্যাসক্ষেত্র অক্সিডেন্টাল নামে এক বহুজাতিক কোম্পানিকে লিজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে সারা দেশ উত্তাল হয়ে উঠে।

দেশি গ্যাসক্ষেত্র বিদেশিদের হাতে ইজারা দেয়ার প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৫ দলীয় জোট ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ৭ দলীয় জোট ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন শুরু করে। ড. কামাল হোসেনও বিভিন্ন সভা সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন।

কিন্তু পরবর্তীতে জানা গেল যে কোম্পানিটিকে গ্যাসক্ষেত্রের ইজারা দেয়া হয়েছে, সেই অক্সিডেন্টাল কোম্পানির লিগাল অ্যাডভাইজর হলেন ড. কামাল হোসেন।
এটি ছিল ড. কামালের চতুর্থ ডিগবাজি।

®®ডিগবাজি নাম্বার পাঁচ---

১৯৮৬ সালে বাংলাদেশে তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। স্বৈরশাসক এরশাদের সময় অনুষ্ঠিত হওয়া এই নির্বাচন নিয়ে প্রচুর বিতর্ক রয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ওই নির্বাচনে অংশ নিতে চাননি।

কিন্তু ড. কামাল হোসেন তাকে নির্বাচনে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। ড. কামাল বলেন, এই নির্বাচনে না গেলে কোন দিনও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে না। শত অনুরোধ পীড়াপীড়ির পর আওয়ামী লীগ নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

ভোটগ্রহণের দিন হঠাৎ করেই মধ্যরাতে ফল ঘোষণা করা হয় নির্বাচনের, বিজয়ী ঘোষণা করা হয় জাতীয় পার্টিকে।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মিডিয় ক্যু করেন স্বৈরশাসক এরশাদ। মজার ব্যাপার হচ্ছে, আওয়ামী লীগকে নিয়ে আসতে সবচেয়ে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করেছিলেন ড. কামাল।

কিন্তু যেই নির্বাচন শেষ হয়ে গেল, বরাবরের মতো ভোল পাল্টে ফেললেন তিনি। বলতে শুরু করলেন, আওয়ামী লীগের এই নির্বাচনে যাওয়া ঠিক হয়নি, অনেক বড় ভুল হয়েছে।

এই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগকে অনেক বদনাম শুনতে হয়েছে, কিন্তু এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ডিগবাজিতে দক্ষ কামাল হোসেনের গায়ে একটি আঁচও লাগেনি।

®®ডিগবাজি নাম্বার ছয়---

আওয়ামী লীগের জন্য একানব্বই সালের নির্বাচনের স্ট্র্যাটেজি তৈরি করেছিলেন ড. কামাল হোসেন। কিন্তু ওই নির্বাচনে হেরে যায় আওয়ামী লীগ।

এ ঘটনায় ড. কামাল হোসেন মনে করলেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের আর ভবিষ্যত নেই। তাই আর আওয়ামী লীগে থাকা যাবে না।

যে আওয়ামী লীগের কারণে তিনি আজকের কামাল হোসেন হয়েছেন, সেই দলকেই দুর্দিনে ত্যাগ করলেন তিনি। তৈরি করলেন নতুন রাজনৈতিক দল গণফোরাম।

ড. কামাল হোসেন গণফোরাম থেকে এই পর্যন্ত তিনটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন আর তিনটি নির্বাচনেই তাঁর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এই নির্বাচনগুলোতে অংশ নিয়ে তিনি সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন ১৬২৭টি।

ষষ্ঠ ডিগবাজিটি যে ড. কামালের জন্য সুখকর হয়নি এই পরিসংখ্যান থেকেই তা বোঝা যাচ্ছে।

®®ডিগবাজি নাম্বার সাত---

কারচুপির নির্বাচন জিতে ২০০১ সালের অক্টোবরে বিএনপি-জামায়াত জোট রাষ্ট্রক্ষমতায় আসলো। সরকার গঠন করতে না করতেই দেশজুড়ে তান্ডব শুরু করলো বিএনপি জামায়াত জোট। তারা নির্যাতন শুরু করলো সংখ্যালঘুদের। বিএনপি জামায়াত জোটের সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষা পেল না মন্দির, গির্জা এমনকি মসজিদও।

এই তান্ডব, এই মানবতার বিরদ্ধে অপরাধের বিরুদ্ধে ড. কামাল হোসেন কিন্তু ‘টু’ শব্দ করলেন না। বিএনপি জামায়াতের অত্যাচারে মানুষের দুর্ভোগ, হাহাকার, আর্তনাদ সীমা ছাড়িয়ে গেলেও ড. কামাল রইলেন ধ্যানীর মতো নিশ্চুপ।

এছাড়া ২০০২ সালে অপারেশন ক্লিন হার্ট নামে যৌথ বাহিনীর এক অভিযান শুরু হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার নামে আসলে ওই অভিযান ছিল নির্বিচারে মানুষ হত্যার লাইসেন্স। পরবর্তীতে এই হত্যাকাণ্ডের বৈধতা নিয়ে ইনডেমনিটি আদেশও জারি করা হয়।

ড. কামাল নিজেকে সংবিধান প্রণেতা হিসেবে পরিচয় দেন, কথায় কথায় মানবতার বুলি আওড়ান। কিন্তু অপারেশন ক্লিন হার্টের মতো মানবতাবিরোধী অভিযানের ব্যাপারেও ড. কামাল হোসেন ছিলেন নীরব।

®®ডিগবাজি নাম্বার আট---

দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়, যার প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফখরুদ্দীন আহমদ।

ওই অনির্বাচিত সরকার ছিল সংবিধান পরিপন্থী। ড. কামাল হোসেন কথায় কথায় সবাইকে গণতন্ত্র শেখান, নিজেকে সংবিধান প্রণেতা বলে দাবি করেন।

কিন্তু এক এগারোর প্রেক্ষাপটে তিনি ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’ তত্ত্ব আবিষ্কার করলেন। অনির্বাচিত সরকারের সমর্থনে ড. কামাল হোসেন ফতোয়া দিলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত নির্বাচন না হবে ততক্ষণ ক্ষমতায় থাকতে পারবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার।

ড. কামাল হোসেনের এই তত্তের উপর ভিত্তি করে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার লাইসেন্স পেয়েছিল তৎকালীন অনির্বাচিত সরকার।

®®ডিগবাজি নাম্বার নয়---

২০১৪ সালে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে ৭২’এর সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ পুনঃস্থাপনের মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদকে ফিরিয়ে দেয়া হয়।

৭২’এর সংবিধান প্রণয়ন কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন ড. কামাল হোসেন। ‘বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের উপর ন্যস্ত থাকবে’ সেকথা ৭২’এর সংবিধানেই বলা হয়েছিল।

কিন্তু ২০১৪ সালে যখন বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ৭২’এর সংবিধানে ফিরে গেল এবং বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করা হলো তখন তিনি এর বিরোধিতা করলেন। এমনকি ২০১৬ সালে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে বাতিলও করা হলো ষোড়শ সংশোধনী।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ড. কামালের মতো এমন দ্বৈত চরিত্রের অধিকারী সম্ভবত আর কেউ নেই। নিজেকে ৭২’এর সংবিধান প্রণেতা হিসেবে দাবি করা আবার সেই সংবিধানেরই বিরোধিতা করা একমাত্র ড. কামালের পক্ষেই সম্ভব।

®®ডিগবাজি নাম্বার দশ---

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশীয় রাজনীতিতে জোট-ঐক্য প্রভৃতি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামের জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়ার কথা বেশ আলোচিত হচ্ছে। এসব জোট গঠনকে কেন্দ্র করে ড. কামাল হোসেন বলেছিলেন, জামায়াত থাকলে কোন জোট করবেন না তিনি।

কিন্তু ড. কামাল আবার ডিগবাজি খেলেন। বিএনপির দুই নেতা নিয়ে জামায়াত বিএনপির আইনজীবীদের একটি মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখলেন তিনি।

নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য যারা বারবার ডিগবাজি দেয় কিংবা নিজেদের স্বার্থের খাতিরে যেসব রাজনীতিবিদ সংবিধানের ব্যাখ্যা পরিবর্তন করে, দল পরিবর্তন করে প্রকৃতপক্ষে তাদের আদর্শ বলে কিছু নেই।

এসকল ডিগবাজিপ্রেমী রাজনীতিবিদদের ওপর জনগণ কতটুকু আস্থা রাখতে পারে তা নিজেই বিচার করুন।

আমাদের রাজনীতি ডট কম

শনিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

আমার অন্তর আগ্নেয়গিরি

আমার বুকটা যেন ইটের বাটা
অন্তর আগ্নেয়গিরি---!!
দু'চোখ দু'টি সাগর যেন---!!
বইছে লোনা পানি---!
আমার- অন্তর আগ্নেয়গিরি---

আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা
ছিল এ অন্তরে---
পাহাড় সমান বিশ্বাস আমি
দিয়েছিলাম তারে---।।
আমার আকাশ মেঘে ঢাকা ---!!
হৃদয় মরুভূমি -
 আমার- অন্তর আগ্নেয়গিরি---

স্বপ্ন হারা দু'চোখ আমার
আজও তোমায় খুঁজে---
কতই সুখে সাজাইছো ঘর
তুমি অন্য বুকে---!!
শূন্য এ বুক তুমি ছাড়া---!!
পুড়ছে দিবানিশি---
আমার- অন্তর আগ্নেয়গিরি---

হয়তো অনেক সুখেই আছো
আমায় গেছো ভুলে...
নিজের হাতেই আমার ঘরে
দিয়েছো আগুন জ্বেলে...।
ব্যর্থ নয়ন প্রেম আগুনে...।।
পুড়ায় দিন রজনী...।
আমার অন্তর আগ্নেয়গিরি।

শুক্রবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

ছাই হবে তোর ধর্ম এলেম

বুঝে নারে অবোধ মন-
মিছে করে জ্বালাতন বড়ই অবুঝ,
জীবনটা সুখের নয়-
যা দেখি সব অভিনয় স্ব'কেই খোঁজ।

চুল পাকিবে নড়িবে দাঁত-
বোধ হারিয়ে হবে উম্মাদ আসিবে সময়,
হারাবে তোর জীবন যৌবন-
ডুবিস-নারে পেয়ে মৌ-বন বাড়ারে হৃদয়।

মরিলে সব হবে মাটি-
মানব প্রেমে হৃদয় খাঁটি রাখছ'নি খবর,
হিসেব তোমার হবে দিতে-
কি করিলা মানুষ-রূপে জগতের উপর।

জাত বে-জাতের কর বড়াই-
উঁচু নিচুর মিথ্যে লড়াই ছাড়'রে এবার,
দুদিনের এই ধর্মশালা-
খুঁজে নারে ওই বিধাতা তিনি'যে সবার।

সবার খবর রাখেন তিনি-
গড়ছেন যিনি এই ধরণী করছেন ভরণ,
আপন পর তার কাছে নাই-
এক ঠিকানায় যাবো সবাই রাখিও স্মরণ।

কি হবে এই আভিজাত্য-
মরণের স্মরণ কর নিত্য এটাই বাস্তব,
রবে না তোর সঙ্গে কিছু-
যম'যে তোর করছে পিছু রেহাই অসম্ভব।

মানুষ ধর খোঁজ মানুষ-
রঙ দেখিয়া না হই বেহুঁশ মানুষ ভজিয়া,
স্রষ্টার প্রেমে অমরত্ব-
মিছে রে তোর ধনরত্ন মিছে-ই দুনিয়া।

সৃষ্টির মাঝে স্রষ্টা পাবে-
মানুষকে যাও ভালোবেসে ধরিতে স্রষ্টা,
প্রাণে-প্রাণে স্রষ্টার প্রেম-
ছাই হবে তোর ধর্ম-এলেম হলে পথভ্রষ্টা।

jibanshagor.blogspot.com

বুধবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

দুঃখ রইল আমার মনে

দুঃখ রইল আমার মনে
হইল না সুখ এই জীবনে
এত আশা ভালোবাসা
দিলাম কতই হৃদয় ভরে।
মনের খাচায় প্রেমের পাখি
পুষি কত আপন করে,
বিশ্বাস কেড়ে দিল ফাঁকি
উঁড়াল দিল দূর আকাশে।

সকাল দুপুর সন্ধ্যা রাতি
করত আমায় ডাকাডাকি,
কষ্ট যতো ভুলেই যেতাম
দেখলে ওমুখ হাসিখুশি।
নিত্য সুখের কতশত
রইলো পড়ে মুধুর স্মৃতি,
প্রয়োজন কি ছিল এতো
সবই ভুলে যাবে যদি।

স্বপ্ন মধুর ভালোবাসা
বিষের মত করছে ক্ষত,
পূর্ণিমারাত চাঁদ দেখিয়া
মন ভরে না আগের মত।
মিষ্টি সুরের গান শুনিয়া
বাড়েই কেবল দুঃখ যত,
শুনলে কভু প্রেমের কথা
পড়ছে ক্ষতয় লবন যেন।

ডাহুক ডাকে দূরের বনে
বন্ধুর কথাই পড়ছে মনে,
হিজল ডালে ডাকছে পাখি
সে বিনে ঘর শূন্য লাগে।
আশায় দুচোখ স্বপ্ন আঁকি
আবার যদি পাই গো তারে,
মনের ঘরে রাখবো বাঁধি
মধুর ছোঁয়ায় প্রেম শিকলে।

আমার ভুবন মেঘেই ঢাকা
ঘুরছে না আর ভাগ্য চাকা,
কি আশায় আর বাঁধিব ঘর
সুখ বুঝি না তাকে ছাড়া।
তৃপ্তি আমার বন্ধুর বুকে
পুড়াক যত দিক'না ব্যথা,
ফিরে যদি নাই'বা আসে
সবই বিফল জীবন বৃথা।

মঙ্গলবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

রাজসিক অঙ্গের ভাঁজে ভাঁজে

জ্যোৎস্নাময় মৃদু-ঠাণ্ডাগরম রাতটি যেন স্বার্থক..!
বিগত কয়েক বছরের অতৃপ্ত নয়ন-
তোমাকে প্রথম দেখেই তৃপ্ততায় ভরে ওঠেছিল;
ভেতরের অন্দরমহল হয়েছিল আলোকিত।
বিশাল ওই দেহের লোভে পড়েছিল মনটা,
সুখ যেন ছড়ানো ছিলো শরীরের প্রতিটি অঙ্গে;
রাজসিক অঙ্গের ভাঁজে ভাঁজে ভরা ছিল যৌবন।

চোখ দুটি যেন তোমারই মত কাউকে খুঁজেছিল-
বহুকাল... বহুযুগ ধরে ছিলো তৃষ্ণার্ত...।
মুহুর্তেই প্রতীক্ষিত মনটার হয়েছিল যোগদৃষ্টি,
তোমার রসাল যৌবনে মত্ত ছিল মনটা বেহায়াপনায়!
ঘুরে ফিরে যেন তোমাকেই খুঁজছিল সম্মুখে।
খুঁজবেই না কেন...?
ভালো লাগার মতো সব গুণাগুণইতো-
ওই রাজসিক শরীরের ভাঁজে ভাঁজে ছিল লুকানো।

অবাধ্য মনটাকে কোন মতেই সামলাতে পরিনি,
একান্ত আপন হয়ে মিশেছি কল্পনায় তোমাতে..!
আহ! কি মধুর ছিল সে অনুভূতি...!
পারিনি কেবল লোকচক্ষুর ভয়ে তোমাকে জানাতে।
সারারাত চোখেই ছিলে তুমি-
উত্তেজনায় উম্মাদ হয়েছিল আমার সমস্ত ইন্দ্রীয়-
বাকি রাত তোমাকেই ভেবে ভেবে, ছিল না ঘুম...।

সত্যিই বলছি- তোমার মতন এতো আকর্ষণ-
দেখিনি কারোর মাঝে আজকের আগে...
যেমন যুবতী তুমি তেমনি যৌবনা তোমার মন।
সাহসী হিয়া তোমার- বুঝিয়েছ বিদায়ের ক্ষণে,
মনের কাঙ্খিত আশা তুমি করেছো পূরণ...।

তুমি যখন চেয়ে নিলে আমার মোবাইল নাম্বার,
তাতেই বুঝেছি স্বার্থক সেই রাত, সেই ক্ষণ।
পাইনি তোমায় কল্পনায় ভেবেছি যেমন,
তাতে কি...হয়তো পেয়েছিলাম তোমার মন...।

২৫-৩-২০১৬ইং, লেপসিয়া।

সোমবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

ভুল তো সেটাই

বড় ভুল করেছিলাম তোমায় ভালোবেসে,
তাই তো জীবনের প্রতি মুহূর্ত কষ্টে কাটে।
রাতের পরে যাচ্ছে রাত চোখ থাকে নির্ঘুম,
কেমনে বুঝাই ত'রে ছিলাম আমি নির্দোষ।

হিসেব নিকেশের থাকেনা অবশিষ্ট কিছু,
পাগল এ'মনটা আজও চলে তোর পিছু।
খুঁজে দিগন্তের সীমানায়- বিশ্বাসে নির্ভীক,
পাইতে দেখা তোর দু'চোখ ছুটে দিক্বিদিক।

মনের ঘরে আছে আজও তোরই বসতি,
হৃদয়ের প্রেম ভালোবাসার নাই কমতি।
তোর ঐ-মনে মিলবে ঠাঁই-ছিল এ'বিশ্বাস,
কতদিন কতভাবে দিয়েছিলে এ'আশ্বাস।

ভাবিনি ছলনা- ভালোবাসার সবই মিথ্যে,
ভুল'তো সেটাই-দেহ নয় চেয়ে মন জিত্তে।
ভুলেছো সবি আজ-বিত্তের সুখে মশগুল,
পুড়া এ-অন্তর- দিয়ে যাই ভুলের মাশুল।

ভুল তো সেটাই

বড় ভুল করেছিলাম তোমায় ভালোবেসে,
তাই তো জীবনের প্রতি মুহূর্ত কষ্টে কাটে।
রাতের পরে যাচ্ছে রাত চোখ থাকে নির্ঘুম,
কেমনে বুঝাই তরে আমি ছিলাম নির্দোষ।

হিসেব নিকেশের থাকেনা অবশিষ্ট কিছু,
পাগল এ'মনটা আজও চলে তোর পিছু।
খুঁজে দিগন্তের সীমানায়- বিশ্বাসে নির্ভীক,
পাইতে দেখা তোর দু'চোখ ছুটে দিক্বিদিক।

মনের ঘরে আছে আজও তোরই বসতি,
হৃদয়ের প্রেম ভালোবাসার নাই কমতি।
তোর ঐ-মনে মিলবে ঠাঁই-ছিল এ'বিশ্বাস,
কতদিন কতভাবে দিয়েছিলে এ'আশ্বাস।

ভাবিনি ছলনা- ভালোবাসার সবই মিথ্যে,
ভুল'তো সেটাই-দেহ নয় চেয়ে মন জিত্তে।
ভুলেছো সবি আজ-বিত্তের সুখে মশগুল,
পুড়া এ-অন্তর- দিয়ে যাই ভুলের মাশুল।

____

পুড়তে চাই না- তবুও যাও তুমি পুড়িয়ে,
নিঃস্ব আজ দেহ মন অন্তর তোমায় দিয়ে।

শুক্রবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

স্রষ্টার স্বরূপ সৃষ্টিতে

মানবতার গান বেঁজে উঠুক প্রাণেপ্রাণে,
ধর্ম জাত আর উঁচু নিচুর নিষ্ঠুরতা ভুলে;
মানুষের'ই মাঝে ফিরে আসুক সাম্যতা,
সৃষ্টির প্রেমেই সদা তোর মিলবে খোদা।

চেয়ে দেখো স্রষ্টার সৃষ্টিতে কতো-প্রেম,
মিটান ক্ষুধা তৃষ্ণা সবার'ই খবর রাখেন;
রাখেন'না বন্ধ কখনওই খাদ্য বেদ্বীনের,
তবে কেন গড়ি মোরা দেয়াল বৈষম্যের?

ও'হে মানুষ অতিথি তুমি এই পৃথিবীতে,
একথা ভুলে তুমি তাল কর তিল থেকে;
অহেতুক দম্ভ তোমার দুনিয়ার বাহাদুরি,
একস্থানেই যাবো সব হবে একই বসতি।

মানুষের মাঝে খুঁজে দেখো পাবে স্রষ্টা,
স্রষ্টার স্বরূপ সৃষ্টিতে মূল'ই মানবিকতা;
বিলিয়ে দাও ভালবাসা মানবের প্রেমে,
ইহকালের এপ্রেম তুমি পাবে পরকালে।

দুঃসময়ে শামসুল হক

শামসুল হক মধ্যপাড়ার শহিদুল হকের একমাত্র ছেলে। শহিদুল হক মরার আগে অনেক সহায় সম্পত্তি রেখে গিয়েছিলেন একমাত্র ছেলে শামসুল হকের জন্য। বড় কষ্ট করে খেয়ে না খেয়ে শহিদুল হক নিজের সম্পত্তি জড়ো করেছিলেন একমাত্র ছেলের ভবিষ্যত চিন্তাভাবনা করে। কিন্তু ছেলেটা কলেজ পর্যন্ত লেখা পড়া করলেও আসল মানুষ হতে পারেননি, নানা ধরনের নেশার মোহে পড়ে ছন্নছাড়া হয়ে গিয়েছিল। তাই বাবা চিন্তায় থাকতেন সবসময় ছেলের ভবিষ্যত চিন্তা করে। জেলা শহরে বড় বড় লোকের সাথে ছিল শহিদুল হকের উঠাবসা। সেই সুবাদে নিজের একমাত্র ছেলেটার একটা ব্যবস্থাও করেছিলেন। ছোট হলেও একটা সরকারি চাকরি জোগাড় করে দিতে পেরেছিলেন ছেলের জন্য। কিন্তু চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী, ছন্নছাড়া শামসুল হক সেই চাকরিটাও ছেড়েছে বাবা বেঁচে থাকতেই।

বাপের কষ্ট করে বাড়ানো সম্পত্তি বিক্রি করে করে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকমের ব্যবসা শুরু করে কিছুদিন যেতে না যেতেই ব্যবসার মূল ধন সহ হাওয়া করতে করতে এখন একেবারেই নিঃস্ব বলা চলে শামসুল হক। একে তো বাড়তি কোন আয় নেই, তারউপর জমিজমা যেটুকু অবশিষ্ট আছে সবই হাওড়ের মাঝে। বছরে একবার ধানের চাষ করতে পারে, তাতে যে ধান পায় তাতে বেঁচে খেয়ে কোনরকম বছর পার করতে পারে শামসুল হক।

চার সদস্যের পরিবার তার, তাতেই হিমশিম খেতে হয় তাকে। এবছর ধানের ফলন খুব ভালো হয়েছে, তাতেও শামসুল হকের কপালের বাজ দূর হয়নি। হবেই বা কেমনে, গতবছর ধারদেনা করে ধানের চাষ করে ভালো ফলন হওয়ার পরও একমন ধানও ঘরে তুলতে পারেনি। আধাপাকা ধানের জমি ভেসে গিয়েছিল হঠাৎ বন্যার পানিতে। সেই ধারদেনা তারপর দুই ছেলের লেখা পড়ার খরচসহ সারাবছর নিজের সংসার চালিয়ে আরও অনেক দেনার মুখে পড়েছে শামসুল হক।

এবার প্রচুর ধানের ফলন হয়েছে, প্রচুর ধান পেয়েছে শামসুল হক, কিন্তু গতবছরের দেনা মিটিয়ে ঘরে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। বছর কেমনে চলবে সেই চিন্তায় তার ঘুম হারাম। পুরনো বদ অভ্যাস ছাড়তে পারলেও অভাবটাকে কোনভাবেই দূর করতে পারছেনা শামসুল হক। চক্ষুলজ্জায় মানুষের বাড়িতে কাজও করতে পারেনা। শহরে গিয়ে অটো চালিয়ে কোনরকম পার করছে বর্তমান সময়। বেশকিছুদিন যাবৎ অটোও পাচ্ছে না, সপ্তাহে তিন থেকে চারদিন বড়জোর অটো ভাগে পায়। তাতে যে টাকা আয় হয় তাতেই চলছে শামসুল হকের সংসার জীবন।

গতবছর থেকে হাওড় অঞ্চলের জন্য প্রচুর রিলিফ দিচ্ছে সরকার। কিন্তু চক্ষুলজ্জার কারণে চেয়ারম্যানের কাছে একটা রিলিফের কার্ডের জন্যও যাইতে পারেনা। পাশের বাড়ির কুদ্দুস প্রতিমাসে রিলিফ পাচ্ছে। ভালোই দিচ্ছে সরকার হাওড় অঞ্চলের গরীব দুঃখী মানুষদের। সয়াবিন তৈল পর্যন্তও রিলিফ কার্ডের মাধ্যমে পাচ্ছে তারা। কুদ্দুসের ছেলেমেয়ে নাই, তাই তার কাছ থেকে দশ কেজি চাউল কিনতে পারে অল্প দামে, বাকি চাউল তার নিজের জন্য রাখে কুদ্দুস। চাউল ডাল তৈলসহ নগদ পাঁচশত টাকা দেয় প্রতিবার। আবার নিজেও কাজবাজ করে কাজের সময় মানুষের বাড়ি, তাতে ভালই চলে কুদ্দুসের সংসার। ঘরে চাউল থাকলে হাওড় নদীর মাছ ধরেও বাজার খরচ চলে যায় তার। কিন্তু শামসুল হকের তো তাও চলছে না।

গতবছর সরকার দশ টাকা কেজি চাউল খোলা বাজারে বিক্রি করেছে পরিবার প্রতি ত্রিশ কেজি মাসিক হারে। সেই চাউল কিনে ভালোই চলছিল শামসুল হক। ঘরে চাউল থাকলে তরকারি কোনরকম জোগাড় হয়েই যায়। সেটাও বন্ধ হয়েছে অনেকদিন, বড়ই দুঃসময়ে শামসুল হক। দশটাকা কেজি চাউল বন্ধ হওয়ায় বড়ই বিপদের মধ্যে আছে শামসুল হকের মতো আরো অনেকেই।

বিকেল বেলা বাড়ির পাশের বাজারে যাওয়ার জন্য পা চালাচ্ছে শামসুল হক। সংসার চিন্তায় পা যেন তার চলতেই চাচ্ছে না সামনের দিকে। পকেটে মাত্র দেড়শ টাকা নিয়ে শামসুল হক বাজারে রওয়ানা দিয়েছে। দুই কেজি চাউল কিনলেই একশো টাকা গায়েব, বাকি টাকায় লবন মরিচ তেল পেঁয়াজ কিনবে কি করে সেই চিন্তায় মাটির সাথে মিশে যাচ্ছে যেন সে।

কিরে শামসুল এত কি চিন্তা করছিস? গায়ে ঝাকুনি দিয়ে করিম শেখের বলা কথায় চমকে উঠে শামসুল। কিরে কি হয়েছে তোর? আমার উপরেই তো উঠে পড়েছিস তুই।
ও ও চাচা আপনাকে দেখতে পাইনি, দুঃখিত চাচা কিছু মনে করবেননা প্লিজ।
আরে না না আমি কিছু মনে করবো না, তার আগে বল কিসের এত চিন্তা তোর মাথায়? এই চিন্তা যদি বাবা বেঁচে থাকতে করতে পারতিস তবে তোর আর এমন করুন দশা হইতো না, দুঃসময় গ্রাস করতে পারতোনা তোকে। যাক সেসব কথা, এখন বল কোথায় যাচ্ছিস?
বাজারে যাচ্ছি চাচা।
তবে কি এতসব ভাবছিস তুই?
কই না তো চাচা। করিম শেখের কাছে নিজের চিন্তা লুকানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হল শামসুল হক। করিম চাচা অনেক সহযোগিতা করে শামসুল'কে, কখনো টাকা দিয়ে কখনওবা পরামর্শ দিয়ে। শামসুল যে শহরে গিয়ে অটো চালায় সেই ব্যবস্থাও করিম চাচাই করে দিয়েছিল, তাই বর্তমান দুঃসময়ের কথা চাচার কাছে লুকাতে চেয়েছিল শামসুল। কিন্তু, শেষমেশ বলতেই হলো তার চিন্তার বিষয় খোলে।
সবকিছু শুনে করিম চাচা বললো আরে বেটা এটা নিয়ে আর এত চিন্তার কি আছে, এভাবে চিন্তা করলে তো তুই অসুস্থ হয়ে পড়বি! আর তুই অসুস্থ হলে তোর সংসার কেমনে চলবে একবার ভেবে দেখেছিস? কথাগুলো শুনতে শুনতে শামসুল হকের চোখের কোণায় জল এসে গেল অতীতে তার ভুলগুলো ভেবে।
করিম চাচা এবারে একটু ধমকের সুরেই বললো, শুন, যে সময় হারিয়েছিস হেয়ালী করে তা আর ফিরে আসবে না শত চেষ্টা করলেও। তবে নিজের ভুলগুলোকে স্মরণে রেখে নিজেকে বদলে নিতে পারবি। এবার আমি কি বলি তা মনোযোগ দিয়ে শুন।
পকেটে কত টাকা আছে?
দেড়শ।
জহরুলের দোকানে যাবি, গিয়ে বলবি আমি পাঠিয়েছি তোকে। সরকার দশটাকা কেজি চাউলের কর্মসূচী আবারো চালু করেছে হাওড় অঞ্চলের জন্য। এই কর্মসূচী যতোদিন এইসব অঞ্চলে কাজ করার সময় না আসবে ততদিন পর্যন্ত চলবে।
করিম চাচার কথা শুনে শামসুল হকের চোখ মুখে খুশির রেশ ফুটে উঠলো, মুহূর্তে চকচকে হয়ে উঠলো শামসুলের মুখচ্ছবি।
জ্বি চাচা বলে শামসুল হক বাজারের দিকে হাটতে লাগলো। মনে মনে ভাবছে যাক বাঁচা গেলো তবে। চাউল গুলো দশটাকা কেজি হলেও তেমন খারাপ না, ভালোই লাগে ভাত খেতে। ভাবছে আটচল্লিশ টাকায় চার কেজি চাল কিনে বাকি টাকায় কিছু কাঁচা বাজার করা যাবে আজ। শামসুল হক একটু দ্রুতই হেটে যেতে লাগলো বাজারের দিকে আর আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলছে- হে আল্লাহ তুমি রহম করেছো আমাদের মতো গরীবের প্রতি....।