বৃহস্পতিবার, ৪ মে, ২০১৭

পুরনো ডায়েরী থেকে- নয়ন ( পর্ব-৩)

ভালোবাসার মানুষের সাথে যখন তুমি শয্যাগত হবে, মিলিত হবে আদিম খেলায়, তখন প্রতিবারই তোমার কাছে মনে হবে নতুন। প্রতিবারই ব্যাপারটা চমৎকার লাগবে। কিন্তু, অন্য কোন মানুষের শয্যায়শী হলে মনে হবে সর্বদাই, সেটা একই পুরনো খেলা।

আমি সবসময় চিন্তিত থাকি যে, তোমাকে ছেড়ে থাকা, তোমার জন্য যতটা না বেদনাদায়ক হবে, তার চেয়েও বেদনাদায়ক হবে আমার জন্য। আমার অভাব তুমি যতোটা না অনুভব করবে, তার চেয়ে অনেক তীব্র হবে আমার কাছে তোমার অভাব বোধ, যা এখনই অনুভব করি। আগে হয়তো এর চেয়ে বেশি অভাব-বোধ করতাম না, যা এখন প্রতি মুহূর্তই তোমার জন্য করি।

বললে হয় তো তুমিও আত্ম অভিমান শুনাবে, তথাপি তোমারও জানা দরকার কেনই বা তোমাকে আমার প্রয়োজন। কারণ, তোমার প্রেম প্রথম আমার জীবনে আলো ফেলেছে। তোমার ঠোটে প্রথম পড়েছে আমার ঠোট, সর্বপ্রথম কামনার ভাব তোমার উপর প্রভাব বিস্তার করেছে। তোমাকেই প্রথম চেয়েছি। তুমি ছাড়া এই মন হারাবে বাঁচার আশা, হারাবে নিজের ব্যক্তিত্ব, হারাবে জীবন সুখের ঠিকানা.....

লেখাটা ০৬-০১-২০০০ইং সালে লিখেছিলাম। জানিনা তখন মিনতির সাথে কি হয়েছি। তবে সে সময়টা তার আমার গল্পের শেষ কয়েকটি মাসের একটি। তার আর আমার প্রেমকাহিনী ধীরেধীরে এত জানা জানি হয়েছিল যে, সারাক্ষণ ভাবতাম তাকে হারালে আমার সমাজ, পরিচিত জন, শুভাকাঙ্ক্ষী যতো আছে আমাকে ব্যর্থ বলে ধিক্কার দিবে। লজ্জিত হতে হবে লোক সমাজে। আর সবচেয়ে বড় কথা তখন দুজনার মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি চলছিল। সে আমাকে ভুল বুঝতে শুরু করেছিল সেই '৯৭ সাল থেকেই। সেজন্য তাকে হারানোর চিন্তা আমাকে সবসময় পুড়াতো। বিষাদে ভরে তুলতো সময় গুলো। উপরের লেখাটির নিচে ছোট করে একটা লিখা আছে, সেটা লেখার তারিখ ২৬-১১-০০ইং। লেখাটি-

সত্যিই তো! আজ আর আমি সেই অতীতের সুখটুকু ভাবতে পারিনা...! সত্যিই তো আজ অনেক কষ্ট আমার...। কে বুঝবে...! কে বুঝবে এ কষ্ট। বুঝার তো কেউ নেই আর.... নয়ন।

তার বিয়ে হয় ২০০০ সালের ১০ এপ্রিল। তার দুদিন পর জানতে পারি আমি তার বিয়ের খবর মিন্টুর মাধ্যমে। মিন্টু তার ছোট বোন মনিরার কাছে শুনে এসে এই ডায়েরীতে এক জায়গায় লিখে রেখেছে তার নিজের অনুভূতিসহ। কিন্তু আমার কেন জানি তার কয়েকদিন আগে থেকেই মনে হয়েছিল, হারিয়ে ফেলেছি মিনতিকে...! খুব কষ্টে পুড়েছি তখন। তা কেউ জানতো না মিন্টু ছাড়া।

৩০-৩-২০০০ইং তারিখ লিখেছিলাম-

যে কষ্টে ফেলে বন্ধু চলে গেলে তুমি, তা বোঝাতে পারবোনা কাউকে, কি আগুন ধরিয়ে দিলে বুকে....!
তোমার দেয়া এই আঘাত সহ্য করতে পারবো কিনা জানিনা। এও জানি তুমি রাগ করে আমার ভাগ্যে কি লিখে দিলে।
বাহিরের দৃশ্যই আসল দৃশ্য নয়, মনের সৌন্দর্যই হচ্ছে প্রকৃত সৌন্দর্য।

জানিনা রে বন্ধু.... তুই কি ব্যথা দিয়ে গেলি। কেন এমন হলো......

আমার জীবনের যতো আশা হাসি গান মুহূর্তেই মিলিয়ে যায়... ধরে রাখতে পারিনা। মরে যেতে ইচ্ছে করে অনেক সময়, পারিনা, তবুও বাঁচতে হয় প্রকৃতির নিয়মে.... নয়ন।

তাকে হারানোর ভয় আমাকে সবসময় তাড়িয়ে বেড়াতো তখন। মনের মধ্যে কেন জানি মনে হতো, আমি তাকে আর পাবোই না হয়তো। হয়েছিলও তাই। সে একদিন হারিয়েই গিয়েছিল, আমার সন্দেহ সত্য করে।

২৪-৪-২০০০ইং সালের লেখা-

তুমি তো আজ তোমার সুখটাকে বেছে নিয়ে
চলে গেছো অনেক দূরে আমার থেকে
তোমার ভালো বেছে নিয়ে আমাকে কষ্টের
মহা এক জীবন উপহার দিলে।
যে জীবন, দুঃখ ছাড়া, কষ্ট ছাড়া পাবেনা কিছু।
একদিন তো আমার ছিলে, শুধুই আমার
এখন কেন একা....
বলতে কি পারে কেউ.... আমার মনটা
কিসের আশায় কাঁদবে না..... নয়ন।

আমার পুরনো ডায়েরী থেকে লেখাগুলো একজায়গায় রাখার চিন্তা থেকেই এই পোষ্টের সূচনা। এতে কেবল আমার সেই সময়কার মানসিক অবস্থা, আর কষ্টের প্রকাশ। তাই, কেউ মন খারাপ করার কোন যুক্তি দেখিনা। আমি এখন পনেরো বছর পেরিয়ে নতুন আরেক জীবনে।

তখন কোনকোন সময় তার প্রতি রাগও হতো প্রচুর। তখন তার শাস্তি কামনা করতাম এমনটাই নিচের ০১-১০-২০০০ইং তারিখ লেখা দেখে তাই মনে হচ্ছে....

বিকেলের মিষ্টি রোদে যখনই চোখ পড়ে
মনে পড়ে সেই দিনের কথা- যে দিন
তুমি শুধু আমার হয়েছিলে, দুই জনে
ভেসেছি প্রেম সাগরে- সেই সুন্দর মুহূর্ত গুলি
তোমার হৃদয়ে সুখের দোলা দিয়ে যাবে।
সারাটা জীবন পুড়াবে তোমাকে
নীরবে সবার অজান্তে... বুঝবেনা কেউ
কিসের আগুন হৃদয়ে জ্বলে....।

তুমি এক ছলনাময়ী নারী....
অহংকার তোমার জীবনাদর্শ....।
আমার ভালোবাসা খুন করেছো....
তোমার শাস্তি পাওয়া উচিৎ.....

আমার এখনও মনে হয়, তাকে হারিয়ে যে ব্যথা পেয়েছিলাম, সেই ব্যথাই আমার জীবনে পাওয়া সবচেয়ে বড় ব্যথা। এতটা কষ্ট আমি আর কোনভাবে পাই নি। সেই ৯৪/৯৫ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত আমার সমস্ত চিন্তা ইচ্ছা ভাবনা সুখ দুঃখ সবকিছু ছিল সে। তাকে ঘিরেই আমার চলছিল সবকিছু।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন