রবিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১৭

মিনতির দুটি চিঠি ১৯৯৯ ইং

প্রিয় :- নয়ন
__________আমার নতুন জীবন থেকে জানাই নতুন ভালোবাসা। আশা করি আমার এই চিঠি পেয়ে বাড়ি থেকে চলে যাবেনা, এবং কী রাগ থামিয়ে ভাত খেয়ে নেবে,আমাদের পরীক্ষাতে যাবে, এই বলে শেষ করলাম। তোমার সাথে দেখা হলে কিছু কথা বলবো। আশা করি বাড়ি থেকে চলে যাবেনা

ইতি,
তোমার
(মিনতি)

_______________________________________________________________১৯৯৯ইং

প্রিয় :- নয়ন,
___________আমার ভালোবাসার বাগান থেকে একটি লাল গোলাপের শুভেচ্ছা দিয়ে শুরু করলাম, প্রেম কাহিনী লিখতে। আশা আল্লাহ্ তালার রহমতে ভালো আছো। আমি দূর থেকে এই প্রার্থনা করি, তুমি সুখে থাকো, শান্তিতে থাকো
         
         পড়তে বসেছি, কিন্তু বার বার তোমার কথা মনে পড়তেছেতাই লিখতে বসলাম। এখন আমার মনটা ভীষণ খারাপ তোমার উপর। তুমি চিঠিতে লিখেছো তুমি কলেজে ভর্তি হবে না

আমি জানি, আমার জীবনে কোন সুখ নেই। খোদা আমার জীবনে সুখ লিখে নাই। খোদা শুধু লিখেছে শুধু মানুষের মুখের অপবাদ। জানিনা আর কতো দিন মানুষের মুখের অপবাদ শুনতে হবে। একদিকে তোমার এই অভিমানের কথা, অন্যদিকে বাবা মা'র কথা আমার শুনতে ভালো লাগে না। আমার কথা কোন লোক শুনতে চায় না। আমিও আর কারো মুখের দিকে চেয়ে বেঁচে থাকতে চাই না। আমিও তো তোমাদের মতো একটা মানুষ। কেন তোমরা সবাই আমার সাথে এই ব্যবহার করো। আমার আর এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে না। বলো কার আশায় বেঁচে থাকবো। যার জন্য আমি চুরি করি সেই আমাকে বলে চোর। তাহলে এই পৃথিবীতে আমার বেঁচে থেকে কি হবে। আমি আর অপবাদ শুনে বেঁচে থাকতে চাই না। কি সুন্দর ভাবে চিঠিতে লেখেছো কলেজে ভর্তি হবে না। এতো সুন্দর কথা শুনে কোন মানুষের মনে দুঃখ থাকে! এই কথাটা বলার আগে তোমার মনে একটু লজ্জা করে নাই। আবার বিয়ে করতে চাও। বিয়ে করে বউ এর খরচ বহন করতে পারবেনা কার উপর দিবে, বাবা মা'র উপর? তোমার একটুও লজ্জা করে না, এই মুখ নিয়ে তুমি বিয়ে করতে চাও। কিভাবে তুমি লিখেছো, তুমি কলেজে ভর্তি হবে না। এই কথা যেনো আমি আর কোন দিন না শুনি। যত তাড়াতাড়ি পারো কলেজে ভর্তি হয়ে যাবেশেরপুর ছাড়া অন্য কোন জায়গা। দেখো আমার মনটা ভীষণ খারাপ তোমার এই কথা শুনে

নয়ন, তুমি কেনো বুঝতেছো না একদিন যেন বাবা মা এবং কি আমার বাবা মা'র বুঝা না হয়ে থাকতে হয়। আমি মেয়ে মানুষ হয়ে এই কথাটা ভাবি আর তুমি ছেলে মানুষ হয়ে এই কথাটা ভাবো না। একটা কথা মনে রাখিও, ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না যে কোন কাজ করার আগে ভাবতে  হয়কাজ করিয়া ভাবলে কোন লাভ হয় না  তুমি কলেজে ভর্তি তাড়াতাড়ি  ভর্তি হয়ে যাও

ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করিও। আমার জন্য কোন চিন্তা করিও না। আমি ভালো আছি। নিজেকে চিন্তামুক্ত রাখিবা। শরীরের যত্ন নিবে। মনটা বেশি ভালো না তাই বেশি কিছু লিখলামনা। লেখা ভুল হলে ক্ষমা করে দিও। বিদায় নিলাম আজকের মতো। আবার কথা হবে, আসি কেমন

ইতি
______
মমতাজ জাহান
(নয়ন)

___________________________________
তার স্মৃতি বলতে আমার কাছে এই চিঠি দুটি আর আমার মনের ঘরে তার দেয়া ভালোবাসা ছাড়া কিছুই নেই। তার সবগুলো চিঠি আমি পুড়িয়ে ফেলেছিলাম। এই দুটি চিঠি বন্ধু মিন্টু পুড়ার সময় লুকিয়ে রেখেছিল বলেই এখনও মাঝেমধ্যে তার কথা শুনি, তার ভালোবাসা বুঝি, তার শাসন বুঝি, তার কষ্ট বুঝি। চিঠি দুটি যখন পড়ি, তখন মনে হয় মিনতি আমার সাথে কথা বলছে। আমি চুপচাপ শুনে যাচ্ছি। মিনতি, এখনও তোকে ভেবে ভিজে উঠে আমার চোখের পাতা। মনে হয় মনের ভেতরের লোনা জলের সাগরে জলোচ্ছাস শুরু হয়েছে, কোন বাঁধ মানেনা, চোখ ভাসিয়ে দিয়ে যায়। বড় ভালোবাসার ধন ছিলি তুই মিনতি। শুধুই তোর ভালোবাসা আমার প্রয়োজন ছিল। আর যতো দুনিয়ার সুখ আমি চাইনি তোর থেকে। আমার মন মানেনা মিনতি। বড্ড কথা বলতে ইচ্ছে করছে তোর সাথে......

ভালো থাকিস জীবন ভর সুখে শান্তিতে....
আমি তোর সুখেরকাঁটা হয়ে
আর কোনদিন ফোন দিবো না তোকে.....
মনের কষ্টগুলো এভাবেই লিখে যাবো
আকাশের ঠিকানায় পুড়বো একা নীরবে....

শনিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৭

পুরনো ডায়েরী থেকে- নয়ন (পর্ব-২)

সুৃখের পাখি

তুই যে আমার সুখের পাখি,
তোকে আমি কোথায় রাখি।
মনের খাঁচায় যতন করে,
রাখবো তোকে ভালোবেসে।
ভুল বুঝিয়া যাস'না দূরে,
দিস'না রে তুই আমায় ফাঁকি।

সকাল বিকাল মনের ঘরে,
দেখি আমি শুধুই তোরে।
তুই ছাড়া এই ত্রিভুবনে,
কে আছে আর আমায় বোঝে।
কাছে দূরে যেথায় থাকি,
তোকেই আমি ভালোবাসি।
তুই যে আমার সুখের পাখি।।

নিশি জাগি একলা ঘরে,
তুই যে থাকিস অনেক দূরে।
পারিনা তোর পাশে যেতে,
যদি আমায় দাও ফিরিয়ে।
প্রতি রাতে একলা কাঁদি,
তোরে ছাড়া কেমনে থাকি।
তুই যে আমার সুখের পাখি।।

কতটা ভালোবাসা আর বিরহ ছিল তা কি আর পুরোপুরি বোঝানো যায়...। উপরের লেখাটি সম্ভবত ৯৭ বা ৯৮ সালের মধ্যেই লিখেছিলাম। এই কবিতার মতো লেখাটা দেখে মোটামুটি বুঝেছি, বিরহ যাতনা আর কিসের এত কষ্ট প্রতিটি পাতা জুড়ে। তার প্রেমে যেমন সুখী মনে করেছি, আবার তাকে হারানোর ভয়েও পুড়েছি প্রতিনিয়ত। রাত হলে ঘরে একা একা ভাবতাম আর কাঁদতামও অনেক সময়। দুই পরিবারই আমাদের সম্পর্ক মেনে নিতে বিরোধী ছিল। তার ফ্যামিলি নিয়ে যতটা না ভাবতাম তারচেয়েও বেশি ভয়ে ছিলাম আমার ফ্যামিলি নিয়ে, আমার আব্বাকে। কান্নার কারণটা এটাও একটা বড় কারণ ছিল। আমার কাছে মনে হতো, আমাকে নিয়ে আমার সুখের চিন্তা কেউ করেনা। না ভালোবাসার মানুষ, না আমার পরিবারের কেউ। তাই, তখন ভালোবাসার সুখ যেমন ছিল, বিরহ কষ্ট আর হারানো ভয়ে আমাকে পুড়তে হয়েছে সবসময়।

নিচের লেখাটি মনে আছে ২০০২ইং সালের শেষদিকে লিখেছিলাম। তখন ঢাকায় থাকি। তখন আমি বিয়ে করেছি। কিন্তু, বিয়ের পরও কেমন যেন অসুখী মনে হয়েছিল নিজেকে। আর এই অসুখী ভাবটা আমার অনেকদিন পর্যন্ত পুড়িয়েছে। জীবনের প্রথম ভালোবাসা হারানোর পর যতো প্রিয় আর আপনজনের সঙ্গেই থাকা হোক, সেই প্রথম প্রেম হারানোর যন্ত্রণা কভু শেষ হতে চায় না। অনেকেই পারে নিজেকে পাল্টে নিতে। কিন্তু, আমার মতো অনেকেই হয়তো ভুলতে পারেনা.....! সেসময়ের কি সব অদ্ভুত চিন্তা মাথায় ঘুরেছে তা নিচের লেখার প্রশ্ন গুলোতে সামান্য আচ্ করা যেতে পারে....

মিলেনা....

মানুষ কিসের আশায় পথ চলে বলতে পারেন...?
কেউ কি কখনো চলার শেষ খুঁজে পায়....!
আচ্ছা, বিশ্বাস কি...?
এটা কি টাকায় পাওয়া যায কখনো...?

নয়ন অনেক আশার মালা গাঁথে
মনের ঘরে চুপিচুপি।
নয়ন একটা নিরাপদ আশ্রয় চায়,
চায় ভালোবাসার মতো নিষ্পাপ একটি মন।
এখনো সে আশায় পথ চলতে চায়...।
নয়ন নিরাশ আর হতাশার ছত্রছায়ায় পড়ে আছে।
কিন্ত কেন....?

আচ্ছা- কেউ যদি প্রতারণা করে,
নয়ন কেন পারেনা
তার ভালোবাসার সাথে প্রতারণা করতে...?
অনেকেই তো মনের মূল্য দেয় না,
তারা তো ভালোই থাকে সবার কাছে...!
নয়ন যে সত্যিই প্রতারিত তাতেও তার সন্দেহ,
এটা শুধু তার মনের ভ্রান্ত ধারণা মাত্র।
এটা কি সত্যি নাকি ভুল...?

আচ্ছা, আকাশে যদি মেঘ জমে
তাহলে হয়'তো বৃষ্টি ঝরবে ভাবাই যায়।
মাঝেমাঝে ঝড়ও তো নেমে আসে...!
আবার সেই মেঘ সরে সূর্যও তো ভাসে আকাশে।
মিলছে না, নয়নের কিচ্ছু আর মিলেনা,
এর কোন উত্তর খুঁজে পায় না....!

আরেকটা পাতায় দেখি, কিছু স্মৃতিচারণা করা। এর কিছুদিন আগেই আমরা গিয়েছিলাম পাহাড়ে ঘুরতে। তিনদিন দুই রাত্রির অনেক মধুর স্মৃতি যেমন আছে তেমনি অনেক কষ্টও আছে মিশে। তার কয়েক মাস পরেই তার সাথে আমার সামান্য ভুল বোঝাবুঝি হয়। আমাকে সে ছেড়ে যাওয়ার হুমকি দিয়ে চলে যায়। সেই সময়টা আমাকে অনেক পুড়িয়েছে। সে আসবে আমার কাছে যেমন বিশ্বাস ছিল মনে, তেমনি ভয়ও ছিল প্রচুর। যদিও প্রায় সাত বছরের সময়ে আমার সাথে অনেকবার সে অভিমান করে চলে গেছে। কিন্তু থাকতে পারেনি কোনওসময় বেশিদিন। ঠিক কিছুদিন পর ফিরে এসেছে আমার বুকে। বলেছে, আমার ভুল হয়েছে, তুমি রাগ করো না প্লীজ। তার এইরকম ফিরে আসাতে সবসময় আমার সব বিরহ কষ্ট যন্ত্রণা মুহূর্তেই হারিয়ে গেছে। সুখের স্বপ্নে মেতেছি আবার দুজনা....

নিচের লেখাটি ২০০০ই সালের ফেব্রুয়ারির শেষদিকে লিখেছিলাম। আবারও মিনতি রাগ করে চলে যাওয়ার পর সময়টুকুতে।

এই'তো সেদিন

এই'তো সেদিন
দুজন বসেছিলাম ঝর্ণার পাশে।
তোমার কুলে মাথা রেখে শুয়েছিলাম।
একা থাকার বিরহ যন্ত্রণার কথাগুলো বলতেই,
দুচোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছিল জল।
সেদিন, কতনা সোহাগে মুছে দিলে চোখদুটি...।
দুজনার বুকে ছিল গভীর ভালোবাসা,
দুচোখে স্বপ্ন ছিল, মনে কতো আশা...
এখনো মনে হয় সেই দিনগুলি।
এত মধুর সেই ক্ষণ মাত্র কয়দিনেই
মুছে গেল ওই পাষাণ হৃদয় থেকে!
আমি তো পারিনা,
কি করে বলো সেই সুখটুকু ভুলি...!

চলে গেলে তুমি
দিয়ে গেলে একবুক হতাশা।
এই মন পুড়িয়ে, সব স্মৃতি মাড়িয়ে,
সেই সুখ প্রেম তুমি,
এত সহজেই কিভাবে পারো ভুলতে...!

বলেছিলাম বাবা তোমার হবে না রাজি।
তুমি শান্তনা দিলে, তাতে হয়েছে'টা কি...
আমি তো আছি, থাকবো তোমারি,
জীবন মরণে তোমাকেই মানি গো স্বামী।

ওগো আমার সুখের পাখি....
সেই কথাগুলো কি আর এখন
হয় না তোমার মনে...?

সে যখনই আমার সাথে অভিমান করে চলে গেছে, আমার দুনিয়া বিষাদে ভরে থাকতো তার ফিরে আসার আগ পর্যন্ত। মনের কষ্টগুলো একমাত্র কাছের বন্ধুরাই বুঝতো। আর যদি কেউ বুঝতো সে ওই উপরওয়ালা। রাত গভীরেও বসে থাকতাম খোলা আকাশের নিচে। গাইতাম আছে যতো বিরহের গান। মাঝেমধ্যে নিজের কথাগুলোও সাজিয়ে গান গাইতে চেষ্টা করতাম। তেমনি একটি গানের মতো হয়তো সাজাতে চেয়েছিলাম হয়তো, লেখা দেখে তেমনই মনে হচ্ছে....

নিচের লেখাটা ১৯৯৮ইং সালে লেখা, তারিখটা উল্লেখ না থাকায় দিতে পারলাম না।

হৃদয়ের কান্না

পিরিতি পিরিতি বিষম পিরিতি
পিরিতি গলার মালা।
অন্তর পুড়িয়া কয়লা করিয়া
বাড়ায় মনের জ্বালা।।

নয়নে রাখিয়া তোমার ও'নয়ন
বলেছিলে তুমি জীবন ও মরণ।
কি সুখের আশায় আমাকে ভুলিয়া,
অন্যের বুকে আজ বাঁধিলে বাসা।।

ভালোবাসার এক রঙিন মহল
ভাঙিয়া দিয়ে গেলে তুষেরি দহন।
কেন'রে এতো হইলে পাষাণ,
পৌঁছে না কি এই হৃদয়ের কান্না।। 

'৯৮ইং সালে প্রায় ৭/৮ মাস তার সাথে আমার দেখা হয়নি। কোন যোগাযোগ করতে পারিনি তার সাথে। সেই নরকস্থ সময় গুলোই আমার প্রতি তার ভুলটা আরো বৃদ্ধি করে শেষে। কিন্তু আমার সেই কষ্টের দিনগুলো সে বুঝেনি। আমার জীবনে ধ্বংসের পথ সেই সময়েই পাকাপোক্ত হয়। দিনরাত আমাকে নেশায় ডুবে থাকতে হয়েছে। আজও সেই দিনগুলি চোখে অশ্রু এনে দেয়। কোথায় না গিয়েছিলাম তাকে দেখার জন্য। মিলেনি, কোথাও তার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলার সুযোগ। তাকে ভুলে থাকতে করতে হয়েছে অনেককিছু.... আর সেই ভুলেই ভুল বোঝে সে গেছে গেছে আমার সীমানা ছাড়িয়ে....! শেষ পর্যন্তও তাকে আর বোঝাতে পারিনি... সে বোঝতে চায়'নি......

৩০-৩-২০০০ইং তারিখ লেখা নিচের কথাগুলো, সেদিন মরণটাই কাম্য ছিল....

সেই শীতল দিন গুলো পেরিয়ে
আমি আজ বাস্তবতার নির্মমতায়
একবুক যন্ত্রণায় ডুবে আছি।
এই জীবনে আর কি আশা করবো!
আমার আশার দিনগুলো মুছে দিয়ে গেছে
কোনএক বেদনার প্লাবন।

মিথ্যা আর প্রতারণাই আমার জীবনে
প্রতিদান হয়ে ধরা দিল...।
ভালোবাসার প্রতিদানে ছলনা
আমার জীবন অংশ হলো।
আজ মনে পড়ে
আমার ভুল ধারণা, ভুল বিশ্বাস
আমাকে কতটা পিছিয়ে দিয়েছে জীবন থেকে।
আমি বোবাকান্নায় অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছি।
হাইরে অবুঝ মন- তোর চাওয়াটাই ভুল
ভুল তোর ভালোবাসা....!

সুখ, তুই বড়ই কঠিন জিনিশ
যেন সোনার পাখি...!
মরণটাই কাম্য রইল.....

আমি আজও দিব্যি বেঁচে আছি। এখন এই বোকা বোকা কথাগুলো দেখে মাঝেমধ্যে হাসি। আবার কখনো হারিয়ে যাই ভাবনার সীমাহীন প্রান্তরে....

তুই ছিলী আমার জীবনের চরম অধ্যায়...। সেই তুই যখন হারিয়ে গেলি.... তাহলে আর কাকে বিশ্বাস করবো...। আমার বিশ্বাস ভেঙে দিয়ে, ভালোবাসা ভুলে গিয়ে- আহত করে রেখে গেলি....!
হে আল্লাহ্!  এর বিচার করিস.........

(লেখাটুকু ১৪-৪-২০০০ইং তারিখের লেখা)

হা হা হা হাসছি এখন, যাকে এত ভালোবেসেছি তার জন্যও আত্মচিৎকার করে বিচার চেঁয়েছি আল্লাহ্'র কাছে....!

দেখা হবে পরের পর্বে আমার 'পুরনো ডায়েরী থেকে' নেয়া কথা নিয়ে। আজকের মতো বিদায়....

পুরনো ডায়েরী থেকে

অনেকদিন পর- না, অনেক বছর পর আজ সকালে বক্সে মোবাইল চার্জার খুঁজতে গিয়ে পুরনো কয়েকটি ডায়েরী চোখে পড়ে। পরনো বলতে ১৮ থেকে ১৯ বছর আগের। আমার ডায়েরী লেখার সখ বা অভ্যাস কোনটাই কোনদিন ছিল বলে মনে নেই। তবে মন চাইলে অনেক কথাই লিখতাম। সেটা পড়া লেখার খাতাতেই চলে যেতো। মনে আছে, ১৯৯৭ইং সালে এসএসসি পাশ করে কলেজে ভর্তি হওয়ার পর একটা ডায়েরী কিনেছিলাম। তাও কলেজে সবার দেখাদেখি বললেই চলে। এখন আর সেই ডায়েরীটা খুঁজে পাই না। তবে, এইচ এস সি পাশ করার পর ১৯৯৯ইং আমার বড় ভাই আব্দুল লতিফ নূর আমাকে খুশি হয়ে একটা ডায়েরী উপহার দিয়েছিল। সেই ডায়েরীটা উপহার পাওয়ার পরে বিভিন্ন খাতায় লিখা অনেক কথাই তুলে রেখেছিলাম। তাছাড়া দৈনিন্দন কোন ঘটনা তেমন সেখানে লেখা নেই বললেই চলে। যা কয়েকটা দৈনিক বর্ণনা তা সংখ্যায় খুব কম। সেই ডায়েরীটা আজ সকালে বক্সের রাখা ডায়েরী গুলোর নিচ থেকে বেরকরে কিছুক্ষণ পড়লাম। অনেক লেখা কেমন যেন অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বুঝতে সমস্যা না হলেও হয়তো কোনদিন নাও বুঝা যেতে পারে। তাই ভাবলাম লেখাগুলো শেয়ার করবো অনলাইনে।

একটা বিষয় আমাকে অবাক করেছে আজ, তা হলো পরোটা ডায়েরী পাতা উল্টিয়ে মোটামুটিরকম পড়ে কোথাও কোন সুখের অস্তিত্ব পাইলাম না। যেখানে যা লেখা তা কেবল বিষাদিত সব কথা। সেই সময় বা তার অনেক আগে থেকেই গান আমার খুব প্রিয় একটা বিষয় ছিল। নিজের একটা টেপরেকর্ডার ছিল। ক্যাসেট কতগুলো ছিল হিসেব রাখিনি। তো গান শুনতাম খুব বেশি। শুনতে শুনতে অনেক গান মুখস্থ হয়ে যেতো। সেই গান গুলোর অনেক গান আমার ডায়েরীতে জায়গা পেয়েছিল। তবে সেই গান গুলোও বিরহবেদনা ভরা। গানের নিচে একদু লাইন মন্তব্য লেখা সবগুলোর মধ্যে। নিজেরও অনেক লেখা আছে দেখলাম। বেশিরভাগ লেখাই গানের মতো করে নয়তো কবিতার মতো করে। কিছু গদ্যের মতোও লেখা আছে। কিন্তু সবই আমার তখনকার বিরহ বেদনাময় বিষাদিত কথা। ডায়েরীর কোথাও সুখের অস্তিত্ব চোখে পড়লো না। এটা সত্যিই আমাকে অবাক করেছে আজ। কত মানসিক কষ্টের সময় পার করেছি আমি। কতটা যন্ত্রণা ছিল আমার মনে তা ডায়রী দেখে কিছুটা পরিমাপ করা সম্ভব মাত্র। কারণ, অনেক কথাই লিখে রাখিনি সেখানে। কেন লিখতে পারিনি বা লেখিনি সে বিষয়টা আমার মনে পড়ে গেছে ডায়েরী দেখেই।

১৯৯৪ই সালের শেষের দিকে সম্ভবত মিনতির সাথে আমার প্রেম শুরু। শুরু বলতে তার সাথে কথা বা চিঠিপত্র আদান প্রদান শুরু হয়েছিল। আমার এসএসসি পাশ করার পর থেকে মিনতি আর আমার মধ্যে বিরহের শুরু। ঠিকমতো দেখা হতো না, কথা হতো না। যখন না সে কোন খবর পাঠিয়ে ডেকে নিয়ে যেতো। যদিও সংবাদ ছাড়া দেখাও হতো দুজনার তা খুবই কাকতালীয়। তখন মোবাইল ছিল না। দুজনার গ্রাম ছিল দুটা। আমার গ্রাম থেকে একগ্রাম পর ছিল তার গ্রাম। তাই খুঁজ খবর নিতে মাধ্যমই বেশি লাগতো। অনেক সময় মাধ্যমও পাওয়া যেতো না। তখন খুব সমস্যা হতো দুজনার। মাঝেমধ্যে আমিও যেতাম তাদের বাড়ির দিকে ঘুরতে। তা তো আর প্রতিদিন যাওয়া হতো না। মাঝেমধ্যে যাওয়া হতো তার গ্রামের দিকে। বেশিরভাগ দিনই তার সাথে দেখা হতো না। অনেকদিন তার ঘরের পাশে দাঁড়িয়ে তার মুখের দুটো কথা শুনে আসতাম হাসি মুখে। যেদিন তার সেই অদেখা কণ্ঠও ভাগ্যে জুটতো না, সেদিন থেকে প্রতিক্ষণ কেমন চলতো আমার তা বোঝাবো কেমনে। যাক, এভাবেই চলতে হতো আমাদের ১৯৯৭ইং সালের প্রথম থেকে ২০০০ই সালের তৃতীয় মাস পর্যন্ত।

যে বিষয়ে লিখতে বসেছি এখানে তাই বলি। তার আমার প্রেম নিয়ে একটা লেখা আছে আমার। 'বড় ভুল করেছিলাম তোমায় ভালোবেসে' গল্প আকারে লেখা সেখানে তার আমার বিস্তারিত থাকবে। এখানে পুরনো ডায়েরী গুলির লেখাই প্রকাশ করার ইচ্ছে নিয়ে আমার এ লেখা। কিভাবে শুরু করবো সেটাই ভেবে পাচ্ছি না....।

যাক, শুরু তো করতেই হবে, লিখবো যখন ভেবেছি। পুরনো একটা মোটা খাতা পেয়েছি। সম্ভবত লেখার জন্যই কিনেছিলাম। কিন্তু সেখানে বেশি লেখা নেই। মাত্র কয়েকটি লেখাই সেখানে। সেটা থেকেই শুরু করি। এই পোষ্টে সমস্ত লেখাই ১৯৯৫ইং থেকে ২০০৩ইং পর্যন্ত থাকবে আমার বিভিন্ন ডায়েরী বা খাতা থেকে সংগৃহীত।

কবিতার মতো করে লেখা, কোন তারিখ উল্লেখ নেই। এটা সম্ভবত ২০০০ অথবা ০২ সালের মধ্যে লেখা হবে।

তুমি ছাড়া

পাষাণ পৃথিবী আমায় কি দিলে
ভাবো একবার, বিরহ ছাড়া।
ঝলমলে মনটা পুড়িয়ে গেলে,
হৃদয়টাকে করে গেলে কয়লা।
সুখ কি লিখে'নাই প্রভু এই ভাগ্যে
দিয়ে গেলে কেবল বিরহ যন্ত্রণা।

আকাশের তারা গুনে কেটে যায় রাত আমার,
ভালোবাসার বিনিময় কষ্ট পেলাম এমনি বরাত।
ভাগ্যের ফে'রে পড়ে আমার এই জীবন,
চলে যাবে হায় শুধু কি একা!

ঘুমহীন চোখে স্বপ্ন গুলো আমাকে কাঁদায়,
সুন্দর পৃথিবী মেঘলা হলো সুখেরি নেশায়।
সুখ তো এখনো অনেক দূর বহুদূরে,
পাবো কিনা কভু আর তাও অজানা।

মিনতিকে হারানোর পর আমার দিনগুলো কতটা হতাশা ঘেরা ছিল তা আজ ডায়েরী পড়তে গিয়ে বুঝতে পারি। সুখের নেশায় ভালোবেসে ছিলাম মিনতিকে। তখন, একটা ভালোবাসার মানুষ পাওয়াই কাম্য ছিল। পেয়েও ছিলাম মিনতিকে। তাকে পেয়ে ভেবেছিলাম আমার জীবনটা তাকে নিয়েই সুখী করে তুলবো। নতুন জীবনের উম্মাদনাকে লুকিয়ে শুধু স্বপ্ন দেখতাম কবে পাবো তাকে আপন করে। কিন্তু সে স্বপ্ন আমার স্বপ্নই থেকে গেছে, তাকে আর পাওয়া হয়নি আপন করে। তাকে হারানোর ব্যথা কতটা পুড়িয়েছে তা বোঝানো সম্ভব হবে না। সবাই বলবে বোকারাম, একটা মেয়েকে হারিয়ে কেন এত আহাজারী, কেন এত নিঃস্বতা? আসলে যাকে সাপে দংশে'নি কখনো সে কি করে বুঝবে বিষের যন্ত্রণা! আরেকটা পাতায় লিখেছিলাম-

সুখ কোথায়

জীবনের ধারাবাহিতায় যাচ্ছে সময় চলে,
কেবল এই সুন্দর ভুবনে আমার কষ্টগুলো
এখনো রয়ে গেছে হৃদয় জুড়ে।

নয়ন যদি আবার আসতে পারতো পৃথিবীতে,
তাহলে তার জীবনে আর দুঃখকষ্ট থাকতো না।
নয়ন যদি সামান্য সুখের আশায়
বিশ্বাসের মালা গাঁথে, আর যদি সেই মালার
পাপড়ি গুলো ঝড়ে ঝড়ে পড়ে যায়,
তাহলে অবশিষ্ট আর কি রইল পাওয়ার...!
আসলে নয়নের জন্মটাই বৃথা যাবে হয়'তো...
এই জীবনে সুখের দেখা পাবো কি কখনো...!

এই পৃথিবীতে কি একটিও মানুষ নেই....
আমাকে দিতে পারে সামান্য শান্তনা,
দিতে পারে সামান্য সুখের ঠিকানা।
হবে কি কোনদিন কাঙ্ক্ষিত সেই সুখের দেখা...!

হে আল্লাহ্! আমি ভালোবাসতে চেয়েছিলাম,
তোমার সৃষ্টির এক অনন্য সুন্দরী নারীকে।
তার ভালোবাসার রঙেই রাঙাতে চেয়েছি
আমার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত, পারিনি...।
মনে হয় আর সুখ পাওয়া হবে না আমার জীবনে...!
সুখী আমি হতে পারবোনা কোনদিন...।
ভালোবাসা যদি হয় প্রতারিত, মিথ্যে...
প্রেম যদি হয় শুধু কলঙ্কের উৎস
তবে আর সুখ থাকে কোথায়....!

লেখাটা সম্ভবত ২০০১ইং সাল অথবা '০২ইং সালের মধ্যেই লিখেছিলাম। আমি লেখা বিশ্লেষণ করার মতো জ্ঞান কখনওই অর্জন করতে পারিনি। তাই বোঝাতে পারবো না তখনকার এই লেখা গুলোতে কি প্রকাশ করেছিলাম। তবে এইটুকু বোঝতে পারছি, তাকে হারানো ছিল একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত। তাই হয় তো বেশিই কষ্ট পেতাম সবসময়। কয়েক বছর কতটা বিষণ্ণতা আমাকে পুড়েছিল তা এখন বোঝানো আমার পক্ষে সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।

সেই সময় গুলোতে আরেকটা পাতায় লেখা-

যে নয়ন ছিল এক রোখা, জেদি, সাহসী, গম্ভীর...আবার হাস্যময় চঞ্চল কিশোর - কেউ জানেনা সেই নয়ন আজ কিরকম জীবন পার করছে.... কি ভাবে একা মনে সারাক্ষণ। কেনই'বা তার মনের আকাশ জুড়ে লেগেই থাকে কালো মেঘ... কিসের এতো কষ্ট তার... কিসের কষ্টে তার চোখদুটো সবসময় বেদনায় ভরে থাকে......

তখনকার সময়টা কেমন কাটিয়েছি তার কিছুটা বুঝা যায় আমার প্রাণের বন্ধু মিন্টুকে লেখা একটা অসমাপ্ত চিঠি দেখে। চিঠিটা সম্ভবত ২০০১ইং সালেই হবে। যখন আমি চাকরিতে যোগ দিয়েছিলাম, আর বাড়ি যেতে পারছিলাম না। তখন মোবাইল ছিল না, তাই চিঠি লিখেই খুঁজ খবর বা নিজের পরিস্থিতি জানাতে হতো। নিচে বন্ধু মিন্টুকে লেখা সেই অসমাপ্ত চিঠি দিয়ে আজকের মতো বিদায় নিবো। দেখা হবে নতুন আরেক পোষ্টে 'পুরনো ডায়েরী থেকে' নেয়া কথা নিয়ে....

মিন্টু-
  আমার শুভেচ্ছা নিস। আশা করি ভালোই আছিস। আমি দোআ করি তোরা সুখী হ। আল-আমিন কেমন আছে। তোর কাছে চিঠি দিয়েছিলাম। জানিনা তোরা আমার চিঠি পাস কিনা। নাকি পেয়ে আমার প্রতি ঘৃণায় অভিমান জড়িয়ে থাকিস

মিন্টু- কি লিখবো তোদের কাছে। তোদের একটু সংবাদ পাইলে নিজেকে সুখী লাগে। মনে হয় আমার দেহে এখনো প্রাণ আছে। মিন্টু- তোদেরকে নেশা করতে মানা করেছিলাম। আমিও বাদ দিয়েছি। আমার মনের ভিতর তুষের আগুনে পুড়ে ছাই হওয়া অন্তর, মাঝে মাঝে সূর্যের খড়াতাপে তপ্ত হয়ে দেহের ভিতর আঘাত করে। তখন নিজেকে মনে হয় অনেক রোগা। মনে হয় আমিই পৃথিবীর অবহেলিত মানুষ, যে কিনা সারাটা জীবন প্রতারিত হলো আর লাঞ্চনা পেলো প্রিয়জনদের কাছ থেকে। মিন্টু- নিজেকে প্রকৃতির অবস্থান থেকে আলাদা করে নিজের মনের কাছে ফেরারি হয়ে বেঁচে ছিলাম - তাই হয়তো ভালো ছিল ।  আসলে এই পৃথিবী আমাকে চায় না। আমি বোকার মতো পৃথিবীর বুঝা হয়ে বেঁচে আছি

মিন্টু- আমার চাওয়ায় আল্লায়ে ভুল ডুকিয়ে দেয়। - এই জগতে মনের মূল্য পেলাম না.......

আজকের মতো এ পর্যন্তই। আবার দেখা হবে 'পুরনো ডায়েরী থেকে' দ্বিতীয় পর্বে।
সাথে থাকার জন্য কৃতজ্ঞতা জানবেন।