বুধবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৭

আসেন সবাই জেহাদ করি!!

আসুন সবাই জিহাদ করি....!;

কি, উপরের টাইটেল দেখে চমকালেন? এখন তো আর চমকানোর কথা না। আমরা মুসলিমরা তো জিহাদের সাথে খুবই পরিচিত, তাই না? বদরের যুদ্ধ, উহুদের যুদ্ধ কত যুদ্ধ তো আমাদের নবীও করেছেন তাই না? তাহলে আসুন আমরা জিহাদ শুরু করার আগে একটা ছবক নিয়ে নেই।

মুহাম্মাদ সা: এর অনুসারীদের নির্মম অত্যাচার করে তাদের অনেককেই হত্যা করে মক্কার মুশরিকরা। মুহাম্মাদ সা:কেও হত্যার পরিকল্পনা করে তারা। নিজের মুস্টিমেয় কিছু অনুসারীদের রক্ষা করতে ও ইসলামকে টিকিয়ে রাখতে মুহাম্মাদ সা: বাধ্য হন মদীনা শহরে আশ্রয় নিতে। সেখানে মুসলিম, খ্রীস্টান ও ইহুদিদের সাথে একত্রে একটি জাতি গঠন করেন তিনি। কায়েম করেন পৃথিবীর ইতিহাসের প্রথম গনতান্ত্রিক সংবিধান মদীনা সনদ। এর কিছু ধারা ছিল নিম্নরূপ:

১। সনদে স্বাক্ষরকারী মুসলমান, ইহুদি, নাসারা এবং পৌত্তলিকগন সমান নাগরিক অধিকার ভোগ করবেএবং একটি সাধারন জাতি গঠন করবে।

২।মুসলমান ও অমুসলমান বিভিন্ন সম্প্রদায় স্বাধীনভাবে নিজ ধর্ম পালন করবে। কেহ কাহারো ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করিতে পারিবে না।

৩।ব্যক্তিগত অপরাধের জন্য অপরাধীই দায়ী হবে। তার সম্প্রদায় নয়।

৪।দুর্বল ও অসহায়দের রক্ষা করতে হবে তারা যে ধর্মেরই হোক না কেন।

বদরের যুদ্ধ হয় মক্কায় থাকা মুসলিমদের সম্পদ পাচার হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে। কিন্তু উহুদের যুদ্ধই ছিল মদীনা রাস্ট্রের অস্তিত্বের প্রতি প্রথম হুমকি। সেই উহুদের যুদ্ধে মক্কার মুশরিকরা মদীনা দখল করে মুসলিমদের ধরাপৃস্ঠ থেকে মুছে ফেলতে অগ্রসর হয়।তারা যদি সেদিন মদীনা দখল করতে পারত, তবে মুসলিমদের আশ্রয় দেওয়ার অপরাধে মদীনার অন্য সব ধর্মের লোকদের উপরও তারা গনহত্যা চালাত। শিশু নারী কেউই বাদ যেত না। সেদিন মুসলিমরা সম্মিলিতভাবে যুদ্ধ করে রক্ষা করেছিলেন মদীনাকে। রক্ষা করেছিলেন মদীনার খ্রীস্টান ও ইহুদিদেরকে

মুহাম্মাদ সা: ভিন্নধর্মের মানুষদের বাঁচাতে যুদ্ধ করেছেন? কাফেরদের জীবন বাঁচাতে যুদ্ধ করেছেন? জ্বী, হ্যাঁ। এরই নাম জিহাদ।

মুহাম্মাদ সা: সেদিন বলেন নাই মদীনার খ্রীস্টান ও ইহুদিরা আমাদের কেউ না। মুহাম্মাদ সা: সেদিন বলেন নাই মদীনার অন্য সব ধর্মের লোকদের এখান থেকে তাড়াতে হবে।মুহাম্মাদ সা: সেদিন বলেন নাই আমাদের ৯০ ভাগ মুসলিমদের রাস্ট্রে কোন খ্রীস্টান ও ইহুদি থাকতে পারবে না। তিনি সেদিন ইসলামী রাষ্ট্র, ইসলামী রাষ্ট্র বলে মুখে ফেনা তুলেন নি।তিনি সেদিন মুসলমান, ইহুদি, নাসারা এবং পৌত্তলিকদের সম্মিলিত জাতিরাস্ট্রকে বাঁচাতে অস্ত্র ধরেছিলেন।যে জাতিরাস্ট্রে সবার ছিল সমান অধীকার ও স্বাধীনতা

এইবার নিচের আয়াতটা একটু দেখেন:

যাদেরকে তাদের ঘর-বাড়ী থেকে অন্যায়ভাবে বহিস্কার করা হয়েছে শুধু এই অপরাধে যে, তারা বলে আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ। আল্লাহ যদি মানবজাতির একদলকে অপর দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন,তবে (খ্রীষ্টানদের) নির্জন গির্জা,এবাদত খানা, (ইহুদীদের) উপাসনালয় এবং মসজিদসমূহ বিধ্বস্ত হয়ে যেত, যেগুলাতে আল্লাহর নাম অধিক স্মরণ করা হয়আল্লাহ নিশ্চয়ই তাদেরকে সাহায্য করবেন, যারা আল্লাহর সাহায্য করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী শক্তিধর।সূরা হাজ্জ্ব- ৩৯

কি আবার চমকালেন? খ্রীষ্টানদের গির্জা, ইহুদীদের উপাসনালয়ে আল্লাহর নাম স্মরণ করা হয়??খ্রীষ্টানদের গির্জা, ইহুদীদের উপাসনালকে আল্লাহ রক্ষা করেছেন? কুরআন বলছে এই কথা? জ্বি, কুরআনই বলছে।

একদল ব্যাক্তি নিচের মত কিছু আয়াত দেখিয়ে ভিন্ন কথা বলার চেস্টা করবে:

অতঃপর নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে মুশরিকদের হত্যা কর যেখানে তাদের পাও, তাদের বন্দী কর এবং অবরোধ কর। আর প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের সন্ধানে ওঁৎ পেতে বসে থাক। কিন্তু যদি তারা তওবা করে, নামায কায়েম করে, যাকাত আদায় করে, তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। ----- সুরা তাওবা (আয়াত ৫)

কুরানের কোন আয়াতের প্রকৃত অর্থ জানতে হলে তার প্রেক্ষাপট তথা শানে নুজুল জানতে হয়।আমার একজন ক্লোজ ফ্রেন্ড যদি আজ আপনাকে এসে বলে যে, দরবেশমুসাফির বলেছে যে, সে আমাকে মেরেই ফেলবে, তবে আপনার কাছে কি মনে হবে? মনে হবে আমি একজন সন্ত্রাসী, তাই না? কিন্তু ঐ ফ্রেন্ড যদি ঘটনার প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে বলে যে, আমি দরবেশমুসাফিরের বন্ধু ও সে আমার সাথে মজা করে ওকথা বলেছে, তবে আপনার কাছে কি মনে হবে?এটাই প্রেক্ষাপটের গুরুত্ব।

এবার ঐ আয়াতের প্রেক্ষাপট তথা শানে নুজুলের মূল কথাটা নিয়ে আলোচনা করি:

কুরানের সুরা তাওবা নাজিলের সময় মক্কার মূর্তিপূজারীরা বা মুশরিকরা মুসলমানদের ধন সম্পদ লুট করছিল। যেখানেই মুসলিম পুরুষ ও নারীদের পাচ্ছিল সেখানেই তাদের নির্মমভাবে হত্যা করছিল। এবার ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের পরিস্থিতি স্মরণ করুন। পাকবাহীনি কি বাংগালীদের ধন সম্পদ লুট করছিল না? যেখানেই বাংগালী পুরুষ ও নারীদের পাচ্ছিল সেখানেই তাদের নির্মমভাবে হত্যা করছিল না?

অতঃপর নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে মুশরিকদের হত্যা কর যেখানে তাদের পাও, তাদের বন্দী কর এবং অবরোধ কর। আর প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের সন্ধানে ওঁৎ পেতে বসে থাক-----সুরা তাওবা ৫

মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানিদের যেখানে পেয়েছেন সেখানেই হত্যা করেছেন, তাই না??তাদের বন্দী করেছেন এবং অবরোধ করেছেন। আর প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের সন্ধানে ওঁৎ পেতে বসে থেকেছেন তাই না?? যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে সৃষ্টিকর্তা কি মানুষকে বসে বসে মার খেতে বলবেন??

কিন্তু একটি প্রশ্ন থেকে যায়। যদি তারা তওবা করে, নামায কায়েম করে, যাকাত আদায় করে, তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। ----- সুরা তাওবা (আয়াত ৫)

এই আয়াত দিয়ে আল্লাহ কি মুশরিকদের মুসলিম হতে বাধ্য করতে বলেননি??এর উত্তর আছে একই সুরার ৬ নং আয়াতেঃ

আর মুশরিকদের কেউ যদি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তবে তাকে আশ্রয় দেবে, যাতে সে আল্লাহর কালাম শুনতে পায়, অতঃপর তাকে তার নিরাপদ স্থানে পৌছে দেবে। এটি এজন্যে যে এরা জ্ঞান রাখে না [সুরা তাওবা: ৬] ...

আশ্রয়? জি আশ্রয়, আপনি ঠিকই পড়েছেন। আল্লাহ যুদ্ধে কেউ আত্মসমর্পণ করলে তাকে শুধু আশ্রয় নয় নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দিতে বলেছেন। সৈনিকদের স্বার্থরক্ষা করে প্রণীত আধুনিক জেনেভা কনভেনশন ও এতটা উদারতা দেখায়নি।

অর্থাৎ তারা যদি মুসলিম হয়ে যায় তবে ভাল।না হলে যদি তারা আত্মসমর্পণ করে তবে তাদের আশ্রয় দিয়ে, নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দিতে হবে।যারা আপনাকে সুরা তাওবার ৫ নং আয়াত দেখিয়ে ইসলামকে সহিংস প্রমান করতে চাইবে তারাই কিন্তু সুরা তাওবার ৬ নং আয়াতের কথা ভুলেও মুখে আনবে না।

কুরআনে এধরনের যত কনফিউজিং আয়াত তারা দেখাবে সবগুলো আয়াতের শানে নজুলেই নিহিত আছে খটকার অবসান। আজ তারা বলে কুরআনের উপর তাদের নাকি অগাধ জ্ঞান। অথচ শানে নজুল সম্পর্কে তাদের কোন ধারনাই নেই।কুরআন পড়া শুরু করার সময়ই শানে নজুল কি তা আমি জানতাম। অথচ এরা এত গবেষনা করেও তা জানে না।

এতক্ষন ধরে তারা, তারা করে আসছি। এই তারা কারা? ইসলামবিদ্বেষী?

আমি এখানে তারা বলতে ইসলামবিদ্বেষী ও জঙ্গীবাদী দুধরনের লোকের কথাই বলছি।আবার চমকালেন?

ইসলামবিদ্বেষীরা কুরআনকে সহিংস গ্রন্থ মনে করে, জঙ্গীবাদীরাও তাই মনে করে।ইসলামবিদ্বেষীরা ইসলামকে যুদ্ধের ধর্ম মনে করে,জঙ্গীবাদীরাও তাই মনে করে।ইসলামবিদ্বেষীদের কুরআন সম্পর্কে কোন জ্ঞান নেই, কিন্তু দাবী করে যে তাদের এ ক্ষেত্রে অবাধ জ্ঞান আছে, জঙ্গীবাদীদেরও কুরআন সম্পর্কে কোন জ্ঞান নেই, কিন্তু তারাও দাবী করে যে তাদের এ ক্ষেত্রে অবাধ জ্ঞান আছে।এবং এরা সবসময়ই এগুলো প্রমান করতে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে থাকে।

জঙ্গীবাদিরা যেমন আজকের অশান্তি সৃস্টি করার জন্য দায়ী তেমন এই ইসলামবিদ্বেষীরাও সেই অশান্তি জিইয়ে রাখার জন্য দায়ী।এদের কারনেই ইসলামের প্রথম যুগে যেভাবে নিরিহ মানুষ হত্যা করা হচ্ছিল এখনও তাই হচ্ছে।তখন যেভাবে মুসলিমদের ধরাপৃস্ঠ থেকে মুছে ফেলার চেস্টা হচ্ছিল, মতাদর্শগতভাবে এখনও তাই হচ্ছে। তবে কেন এখনও জিহাদ করব না? জিহাদ মানে কিন্তু যুদ্ধ নয়। এর মানে আপ্রান প্রচেস্টা।বর্তমানে সারা বিশ্বে ইসলামের নামে চলতে থাকা অরাজকতা বন্ধে আপ্রান প্রচেস্টা চালানোই হবে এ যুগের জিহাদ।

মুসলিমদের আবার জিহাদ করার সময় এসেছে। মুহাম্মদ সা: দেখানো পথে জিহাদ করার সময় এসেছে। আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা মুহাম্মদ সা: এর অনুসারী।আমরা নারী, শিশু হত্যাকারী ওসামা বিন লাদেন, আবু বকর আল বাগদাদীর অনুসারী নই।আমরা নারী, শিশু রক্ষাকারী দেশপ্রেমিক মুহাম্মদ সা: এর উম্মত।আমরা যদি জিহাদ করি তবে তিনি যেভাবে জিহাদ করেছেন আমরা সেভাবেই করব।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মত আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশ আজ ক্ষতবিক্ষত। ভিন্নধর্মালম্বী ভাই, নাস্তিক, মুসলিম এমনকি সাধারন মানুষ আজ অত্যাচারীত।আজ যদি আমরা মদীনার মতই আমাদের বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র রক্ষা করতে এগিয়ে না আসি তবে হাশরের ময়দানে এদেশের প্রত্যেক মুসলমানকে জবাবদিহি করতে হবে।

তাই আসুন আমরা জিহাদের শপথ নেই। আমাদের দেশে আর একজন নিরিহ মানুষের মৃত্যুও যেন না হয়। আমাদের দেশের প্রত্যেক ভিন্নধর্মালম্বী ভাই যাতে নিজ নিজ ধর্ম শান্তিতে পালন করতে পারে। আর একজন জঙ্গীও যাতে তৈরী না হয় সেজন্য আসুন আপ্রান প্রচেস্টা চালাই। আজ রাসূলুল্লাহ সা: এর আদর্শ, তাঁর শিক্ষা, দেশাত্মবোধের বার্তা হারিয়ে যেতে বসেছে। আমরা সেটা আবার ফিরিয়ে আনব ইনশাআল্লাহ।

মতাদর্শগতভাবে যেসকল ইসলামবিদ্বেষীরা মূলত জঙ্গীবাদীদেরকেই ইন্ধন দিয়ে আসছে আমরা তাদের বিরুদ্ধে কলমের লড়াই চালাব। ইসলামকে নিয়ে সকল অপপ্রচারের বুদ্ধিদীপ্ত সত্য জবাব দেব।

আর এই লড়াইয়ে যদি আমাদের জীবন চলে যায় তবে আমরা হব শহীদ।সফল হলে গাজী।হয়, শহীদ নয় গাজী। এঁদের প্রতি আল্লাহর অসীম দয়ার কথা আমরা যেন ভুলে না যাই। মুসলমান হিসেবে আমরা আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করবনা। আমরা কারো ভয়ে লুকিয়ে থাকবনা। কারো ভয়ে আত্মগোপন করব না। জঙ্গীবাদীদের বোমা,বন্দুক আমাদের কাছে তুচ্ছ। আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করেনা যে তার আবার কিসের ভয়?ইসলামের প্রথম যুগের সাহাবীরা যেভাবে সফল হয়েছিলেন, আমরাও সেভাব সফল হব ইনশাআল্লাহ।

তাই আসুন আমরা জিহাদে ঝাঁপিয়ে পড়ি। আল্লাহু আকবার।

মিথ্যা তো মুছে যাবেই, এর প্রকৃতিই তো মুছে যাওয়া। - কুরআন 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন