শুক্রবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৭

প্রতীক্ষা (অনুকাব্য)


ওই আকাশের চাঁদটি দেখো-
কতো হাস্য-উজ্জল, 
মুগ্ধ পৃথিবী তার জ্যোৎস্নাময়ী রূপ দেখে।
তুমি 
তেমনি আলোকিত হয়ে থাকো 
আমার মনের আকাশ জুড়ে।
আমি দেখিব মুগ্ধ নয়নে,
ভাসিব আলোর মিছিলে
তোমার জোছনায়-মুগ্ধতা বুকে নিয়ে। 
আমি 
গেয়ে যাবো গান ওমুখ দেখে দেখে-
স্বপ্নমুখর হয়ে ভাসিব কল্পনায়, রাত্রি হয়ে। 
নেচে উঠবে মন-
তোমার হাসির ছন্দ-তালে, 
নাচবে হিয়া সেই হাসির সুরে সুরে। 


নীল হয়ে থেকো-আমার জীবন আকাশে, 
আমি দূর হতে ও-নীল মাখিয়ে 
হারিয়ে যাবো তোমার মাঝে। 
তোমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশিয়া-ঘুরিব 
আমি কল্পনায় ভাসিব স্বপ্ন-যানে।
তুমি শুধু আলতু করে দিও বুলিয়ে
আমি মুহূর্তেই চঞ্চল হয়ে উঠিব
তোমার ভালোবাসার পরশে।

শুষ্ক মেঘের ডানায় চড়ে
ছোটে যাবো খুব কাছাকাছি, 
মন ভরে হৃদয় চক্ষু দিয়া দেখবো-
একান্ত আপন হয়ে মিশে রবো তোমাতে।
বলবো, বড় বেশি ভালোবাসি তোমায়- 
তাই চলে এসেছি প্রিয়-থাকতে পারিনি দূরে। 
তুমি শুধু মুখ ফিরিয়ে নিও না, 
দিও ঠাই-তোমার হৃদয় কোণে। 


তুমি সাগর হলে প্রিয়া,
আমি পড়ে রবো হয়ে সাগরের পাড়। 
তোমার বুকে জেগে উঠা 
ভালোবাসার ঢেউ গুলো-ক্ষণেক্ষণে 
আমার বুকে এসে আঁছড়ে পরবে- 
পরম তৃপ্তিতে ভরে যাবে বুক আমার।

তোমার লোনা জলে মিশে যাবো, 
ভাসবো, খেলবো, মন যদি চায়- 
দেবো ডুব সাঁতার।
ভরে উঠবে মন, দেখে তোমার 
ঢেউ গুলোর গর্জন-নাচন তাল। 
নাচতে নাচতে এসে ছোঁয়ে যাবে
আমার হৃদয়ের ভেতর-বার। 

আমি জেগে রবো দিনরাত প্রতিক্ষণ,
যদি কখনো তন্দ্রাবেশ হয়-ক্রান্তিতে 
বুজে আসে চোখ, নীরব রাত্রি আঁধার। 
তোমার গর্জনধ্বনি আর ঢেউ এসে
ঘুম ভাঙাবে আমার। 
জনশূন্য নীরব পাড়ে- 
শুধু তুমি আর আমি- মিশে রবো গোপনে,
হবো, চিরযৌবনা-এক আত্মার।


অনুক্ষণে সরোবর নীরব কথন, 
ভুলিতে নাহি পারি হয়'গো স্মরণ!
প্রেম-তত্ত্বে হয়ে মত্ত কতশত ক্ষণ, 
ভেসেছি স্বপ্নলোকে ঘুরছি মধুবন।। 


তুমি হিমালয় হয়ে থেকো সু-উচ্চ,
আমি তোমার উঁচু-বুকে দাঁড়িয়ে
দেখবো নতুন সূর্য। 
ঘুচে যাবে অন্ধকার। স্নিগ্ধ সকাল।
তোমার বুকে জন্মানো দুব্বা-ঘাসে 
লেগে থাকা শিশিরজল,
আমার কম্পন ঠোটে লাগিয়ে-
বুঝে নেবো তোমার ভালোবাসার মিষ্টতা, 
ভরে যাবে হৃদয়, 
আমি আনন্দে হবো উচ্ছসিত। 

তোমার সাথে আকাশের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে, 
আমি ছোঁব কালো-মেঘ দু'হাত বাড়িয়ে। 
তুমি আর আমি এক সাথে দেখবো নীলাদ্রী।
ভাবতেই আমি হই আনন্দে উদ্বেলিত।
আহ! কি অসাধারণ মনে হবে সে মুহূর্ত!
তোমার বুকের ভালোবাসা ছোঁয়ে নেমে আসা
ঝর্ণা ধারায় ভিজাবো আমার অশান্ত মন,
তপ্ত হৃদয় ভিজে হয়ে যাবে শান্ত।
তুমি শুধু বাহুডোরে আগলে রেখো, 
আমি তাতেই হবো পূর্ণ।


প্রিয় মুখটিকে মলিন-
কে দেখিতে চায়!
ও-মুখে হাসি ভরে থাকুক- 
এই'তো কামনায়।
বিরহ যেন বাঁধে না বাসা-
ও-মনে কভু হায়!
তবে যে সুখের ভুবন আমার- 
ভরবে বেদনায়।।


প্রকৃতির সামান্য অবহেলায় বৃক্ষ দেখো- 
ডালপালা থেকে সব পাতা
শুকিয়ে শুকিয়ে পড়ে যেতে থাকে। 
এক সময় মানুষের কঙ্কালের মতোই 
মনে হয় যেন জীবিত বৃক্ষটাকে। 
কোনো পাতা নেই, সবুজতা হারিয়ে, কেমন যেনো
দোষর বাদামী বর্ণের হয়ে গেছে গাছের কাণ্ড গুলো।
পাতাহীন ডালপালা নিয়ে বৃক্ষটির 
বেঁচে থাকার যন্ত্রণাটুকু কখনো কি অনুভব করেছো...?
মৃতের মতো জীবিত বিবর্ণ গাছটিকে 
কতটা কষ্ট বুকে নিয়ে
প্রকৃতির সদয়ের প্রতীক্ষায় দিন গুনতে হয়, 
তা কি কখনওই তুমি বুঝেছো ...? 

না! তুমি বুঝনি কখনো, 
তোমার মনে অনুভূত হয়নি কখনওই! 
তোমার শূন্যতা আমাকে সেই মৃতের মতো 
জীবিত বিবর্ণ গাছটির মতোই করে তুলে। 
কোনো ভাষা নেই তোমার ভাবনায়। 
কোনো প্রাণ নেই, 
অনুভূতিরা সব যেন কেমন ভোঁতা হয়ে যায়। 
তখন আর কোনো আনন্দই
আমাকে উদ্বেলিত করতে পারেনা।
যেন! জীবন থেকে সব সুখানুভূতি হারিয়ে গিয়ে-
কষ্টের মহাসাগরে ডুবে যেতে থাকি...। 
তুমি একটি বারও আমার প্রতি 
তোমার ভালোবাসার হাতটি বাড়াও না!
আমি ডুবে যাই! 
আমার কষ্টগুলো তোমাকে কাঁদায় না।
তোমার অনুভূতিতে আমার কামনা গুলো
অনুভূত হয় না কখনওই! 

অথচ! সেই মৃতের মতো বিবর্ণ বৃক্ষটির প্রার্থনা
প্রকৃতি ঠিকই শোনে- বোঝে,
আবার ভরিয়ে দেয় তার ডালপালা সবুজ পাতায়।
বৃক্ষটি তার হারানো সৌন্দর্য ফিরে পায়। 
আনন্দে বাতাসে দোলায় বৃক্ষে পাতা-
যেন প্রকৃতিকে হাত নেড়ে জানায় কৃতজ্ঞতা।

বৃক্ষের সেই প্রতীক্ষার অবসান হলেও... 
আমার প্রতীক্ষা-কষ্টের প্রহর গুলো শেষ হয় না। 
তুমি আসো না ফিরে এই মৃত হৃদয়ে প্রাণ হয়ে।
আমার কষ্টের সাগরে আসে না ভেলা হয়ে 
তোমার ভালোবাসা...। 
আসলে! তুমি আমাকে ভালোবাসো না।
যা দেখাও সবই তোমার ছলনা। 
তুমি ছলনাময়ী,
তুমি প্রতারণা করে সুখ খুঁজে পাও।
আমি প্রতারিত হয়েও ভালোবেসে যাই, 
তোমার প্রতীক্ষায় প্রহর গুনি।


যদি তোমার হৃদয় কখনো নরম হয়,
যদি কোন মায়ায় ফিরে এসে বলো-
আমি এসেছি প্রিয়- 
এই হাতটি ধরে রেখো। 
আমি মুহূর্তেই জীবনের কষ্ট-যন্ত্রণা
সবকিছু ভুলে তোমার হাতটি ধরে নেবো... 
ছাড়বো না-মরণের আগে।
রাখবো হৃদয় রাজ্যের রানী করে। 
দেখবো ও মুখ আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে
সকাল সন্ধ্যা সাজে। 
হবো পৃথিবীর মহা-সুখী, বলবো-
ভালোবাসা... আমি পেয়েছি ফিরে...
পেয়েছি আমি ভালোবাসি যাকে।। 

(কবিতাটি ২৩ জানুআরি সামুতে প্রকাশ করেছিলাম। আজ আমার স্টোরে তুলে রাখলাম।)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন