রবিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১৭

মিনতির দুটি চিঠি ১৯৯৯ ইং

প্রিয় :- নয়ন
__________আমার নতুন জীবন থেকে জানাই নতুন ভালোবাসা। আশা করি আমার এই চিঠি পেয়ে বাড়ি থেকে চলে যাবেনা, এবং কী রাগ থামিয়ে ভাত খেয়ে নেবে,আমাদের পরীক্ষাতে যাবে, এই বলে শেষ করলাম। তোমার সাথে দেখা হলে কিছু কথা বলবো। আশা করি বাড়ি থেকে চলে যাবেনা

ইতি,
তোমার
(মিনতি)

_______________________________________________________________১৯৯৯ইং

প্রিয় :- নয়ন,
___________আমার ভালোবাসার বাগান থেকে একটি লাল গোলাপের শুভেচ্ছা দিয়ে শুরু করলাম, প্রেম কাহিনী লিখতে। আশা আল্লাহ্ তালার রহমতে ভালো আছো। আমি দূর থেকে এই প্রার্থনা করি, তুমি সুখে থাকো, শান্তিতে থাকো
         
         পড়তে বসেছি, কিন্তু বার বার তোমার কথা মনে পড়তেছেতাই লিখতে বসলাম। এখন আমার মনটা ভীষণ খারাপ তোমার উপর। তুমি চিঠিতে লিখেছো তুমি কলেজে ভর্তি হবে না

আমি জানি, আমার জীবনে কোন সুখ নেই। খোদা আমার জীবনে সুখ লিখে নাই। খোদা শুধু লিখেছে শুধু মানুষের মুখের অপবাদ। জানিনা আর কতো দিন মানুষের মুখের অপবাদ শুনতে হবে। একদিকে তোমার এই অভিমানের কথা, অন্যদিকে বাবা মা'র কথা আমার শুনতে ভালো লাগে না। আমার কথা কোন লোক শুনতে চায় না। আমিও আর কারো মুখের দিকে চেয়ে বেঁচে থাকতে চাই না। আমিও তো তোমাদের মতো একটা মানুষ। কেন তোমরা সবাই আমার সাথে এই ব্যবহার করো। আমার আর এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে না। বলো কার আশায় বেঁচে থাকবো। যার জন্য আমি চুরি করি সেই আমাকে বলে চোর। তাহলে এই পৃথিবীতে আমার বেঁচে থেকে কি হবে। আমি আর অপবাদ শুনে বেঁচে থাকতে চাই না। কি সুন্দর ভাবে চিঠিতে লেখেছো কলেজে ভর্তি হবে না। এতো সুন্দর কথা শুনে কোন মানুষের মনে দুঃখ থাকে! এই কথাটা বলার আগে তোমার মনে একটু লজ্জা করে নাই। আবার বিয়ে করতে চাও। বিয়ে করে বউ এর খরচ বহন করতে পারবেনা কার উপর দিবে, বাবা মা'র উপর? তোমার একটুও লজ্জা করে না, এই মুখ নিয়ে তুমি বিয়ে করতে চাও। কিভাবে তুমি লিখেছো, তুমি কলেজে ভর্তি হবে না। এই কথা যেনো আমি আর কোন দিন না শুনি। যত তাড়াতাড়ি পারো কলেজে ভর্তি হয়ে যাবেশেরপুর ছাড়া অন্য কোন জায়গা। দেখো আমার মনটা ভীষণ খারাপ তোমার এই কথা শুনে

নয়ন, তুমি কেনো বুঝতেছো না একদিন যেন বাবা মা এবং কি আমার বাবা মা'র বুঝা না হয়ে থাকতে হয়। আমি মেয়ে মানুষ হয়ে এই কথাটা ভাবি আর তুমি ছেলে মানুষ হয়ে এই কথাটা ভাবো না। একটা কথা মনে রাখিও, ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না যে কোন কাজ করার আগে ভাবতে  হয়কাজ করিয়া ভাবলে কোন লাভ হয় না  তুমি কলেজে ভর্তি তাড়াতাড়ি  ভর্তি হয়ে যাও

ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করিও। আমার জন্য কোন চিন্তা করিও না। আমি ভালো আছি। নিজেকে চিন্তামুক্ত রাখিবা। শরীরের যত্ন নিবে। মনটা বেশি ভালো না তাই বেশি কিছু লিখলামনা। লেখা ভুল হলে ক্ষমা করে দিও। বিদায় নিলাম আজকের মতো। আবার কথা হবে, আসি কেমন

ইতি
______
মমতাজ জাহান
(নয়ন)

___________________________________
তার স্মৃতি বলতে আমার কাছে এই চিঠি দুটি আর আমার মনের ঘরে তার দেয়া ভালোবাসা ছাড়া কিছুই নেই। তার সবগুলো চিঠি আমি পুড়িয়ে ফেলেছিলাম। এই দুটি চিঠি বন্ধু মিন্টু পুড়ার সময় লুকিয়ে রেখেছিল বলেই এখনও মাঝেমধ্যে তার কথা শুনি, তার ভালোবাসা বুঝি, তার শাসন বুঝি, তার কষ্ট বুঝি। চিঠি দুটি যখন পড়ি, তখন মনে হয় মিনতি আমার সাথে কথা বলছে। আমি চুপচাপ শুনে যাচ্ছি। মিনতি, এখনও তোকে ভেবে ভিজে উঠে আমার চোখের পাতা। মনে হয় মনের ভেতরের লোনা জলের সাগরে জলোচ্ছাস শুরু হয়েছে, কোন বাঁধ মানেনা, চোখ ভাসিয়ে দিয়ে যায়। বড় ভালোবাসার ধন ছিলি তুই মিনতি। শুধুই তোর ভালোবাসা আমার প্রয়োজন ছিল। আর যতো দুনিয়ার সুখ আমি চাইনি তোর থেকে। আমার মন মানেনা মিনতি। বড্ড কথা বলতে ইচ্ছে করছে তোর সাথে......

ভালো থাকিস জীবন ভর সুখে শান্তিতে....
আমি তোর সুখেরকাঁটা হয়ে
আর কোনদিন ফোন দিবো না তোকে.....
মনের কষ্টগুলো এভাবেই লিখে যাবো
আকাশের ঠিকানায় পুড়বো একা নীরবে....

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন